শাহজালাল বিমানবন্দর

কাজ করছেন, মশা কতটুকু কমাতে পেরেছেন: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, কাজ করছেন বলছেন, তবে মশা কতটুকু কমাতে পেরেছেন? এগুলো করে কী হলো? দিন শেষে রেজাল্ট (ফলাফল) কী?

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে আজ সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ প্রশ্ন রাখেন। এরপর বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী সাইফুর রশীদ বলেন, কার্যক্রম চলমান আছে। বিমানবন্দর এলাকায় মশার ধরন, উৎপত্তিস্থল ও লার্ভার উপস্থিতি বিষয়ে জরিপ করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘শাহজালাল বিমানবন্দর: মশার পরান বধিবে কে?’ শিরোনামে এবং ‘ছেঁকে ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা’ শিরোনামে একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই বছরের ৩ মার্চ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন।

পরে গত বছরের নভেম্বরে হাইকোর্ট বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে বসে বিমানবন্দরে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় কার্যক্রম জানিয়ে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী।  

আদালতের রিটের পক্ষে আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ নিজে শুনানি করেন। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী সাইফুর রশীদ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী রিমি নাহরীন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সভার পাঁচটি সিদ্ধান্ত শুনানিতে তুলে ধরেন সিটি করপোরেশনের আইনজীবী রিমি নাহরীন। এতে চলমান লার্ভিসাইডিং, ফগিং এবং মশার প্রজনন ও আশ্রয়স্থল ধ্বংসের কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি দুই মাস পরপর বিমানবন্দর এবং আশপাশের এলাকায় সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা এবং সার্ভে কার্যক্রমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে মশা নিধন কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

শুনানিতে অংশ নিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আইনজীবী সাইফুর রশীদ। আদালত বলেন, গত নভেম্বরে সর্বশেষ আদেশ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান অবস্থা কী?  তখন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী সাইফুর রশীদ বলেন, আগে থেকে নেওয়া কার্যক্রমের পাশাপাশি ওই সভার পর্যবেক্ষণ অনুসারে কার্যক্রম চলমান আছে। এর মধ্যে টেকনিক্যাল বিল্ডিং এলাকায় গাঁদা ফুল, লেমন গ্রাস ও তুলসী গাছ রোপণ, কাওলার আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পুকুরপাড়সহ ঝোপঝাড় পরিষ্কার এবং বিমানবন্দরের এয়ার ও ল্যান্ড সাইডের বিভিন্ন খাল ও পুকুরে গাপ্পই মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। জরিপ করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য রাস্তায় পানি জমে, এতে মশার উপদ্রব বাড়ার আশঙ্কা থাকে—এটিও তো বাস্তবতা। মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, চার বছর আগে রিটটি করা হয়। মশার প্রকারভেদ, উৎপত্তিস্থল ও লার্ভার উপস্থিতি বিষয়ে চারবার জরিপ করা হয়েছে। তবে অবস্থার উন্নতি নেই। আগের প্রতিবেদনে মশার উপস্থিতির ঘনত্ব উল্লেখ করা হলেও এবার তা নেই। মতামতে মশার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে জরিপের সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা–ও নেই।  

এরপর করণীয় বিষয়ে রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে মতামত দিতে বলে আদালত আগামী সোমবার (১৩ মার্চ) পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রাখেন।