রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ওই দম্পতির মেয়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ঘটনার ২ বছর ২ মাস ২৭ দিনের মাথায় বিচারিক আদালত রায় দেন। ওই রায়ের দেড় বছরের মাথায় এই মামলায় হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে ঐশীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী ২০১৮ সালে আপিল বিভাগে আপিল করেন, যা এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
চামেলীবাগের বাসা থেকে ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন মাহফুজের ভাই মশিউর রহমান পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। সেদিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।
এই মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড ও তাঁর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ ডিসেম্বর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন ঐশী। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়। ডেথ রেফারেন্স ও ঐশীর আপিল-জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ঐশীকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর হাইকোর্টের ৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ঐশী লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে ও সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে। শুনানি শেষে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগ ঐশীর লিভ টু আপিল মঞ্জুর এবং রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ করে আদেশ দেন।
জানতে চাইলে ঐশী রহমানের অন্যতম আইনজীবী মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশীর করা লিভ টু আপিল মঞ্জুরের পর নিয়মিত আপিল করা হয়েছে। এই আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, তাঁর (ঐশীর) বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ও মা ডেসটিনিতে চাকরি করতেন। জীবন-জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাঁরা সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি। যখন তাঁরা এটি উপলব্ধি করেছেন, ঠিক সে সময় তাঁর (ঐশীর) জীবন আসক্তির কারণে উচ্ছন্নে গেছে। সাজা কমানোর ক্ষেত্রে পাঁচটি দিক উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটি কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে তেমনটি নয়। বরং কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে সুস্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিচারিক আদালতের রায় সম্পর্কে বলা হয়, সামাজিক অবক্ষয় বিবেচনায় নিয়ে বিচারিক আদালত কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে রায় দেন, যেখানে বলা হয়েছে, একটি মেয়ে তার বাবা-মাকে নিজের হাতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছে। তবে সাজা নির্ধারণ ও বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের আবেগ প্রদর্শনের সুযোগ নেই। কেননা আদালত আইনগত দিকগুলো ও প্রমাণাদি বিবেচনায় নেবে, কী পরিস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটেছে, যেখানে একজন নারী সদস্য ১৯ বছর বয়সে ওই কর্মকাণ্ড করেছেন।