এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, মানুষের জয়গানের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র ছায়ানট। ভোগবাদ নয়, স্বার্থপরতা নয়, মনুষ্যত্বকে পাওয়ার অভিলাষই থাকবে ছায়ানটের আহ্বানে।
ভোরের আলো ফুটতেই আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে এবারের নতুন বছর আবাহনের শুরু হবে। পুরো অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী, সহসভাপতি আতিউর রহমান, সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা এবং যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়।
সংবাদ সম্মেলনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্ষবরণ সার্থক করতে শতাধিক খুদে ও বড় শিল্পী আন্তরিক নিষ্ঠায় প্রায় আড়াই মাস আগে থেকেই গান তোলা আর গলা মেলানোর কাজে নেমেছেন। রমনা উদ্যানে দুই ঘণ্টার এই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।
দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ১৫০ জনের মতো শিল্পী-কর্মীকে ধারণ করতে পারবে, এমন মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে।
আয়োজকেরা বলেছেন, নতুন বাংলা বছরকে বরণ করার এই আয়োজন সার্থক করে তুলতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর বরাবরের মতোই অক্লান্ত সেবা দিয়ে চলেছে। ছায়ানট কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা, লাউড ওয়ার্কস এবং থার্টিনথ হুসার্স ওপেন রোভার গ্রুপের সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাপী বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে কমেছে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, যার ফলে ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, ক্রমান্বয়ে অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্বের ক্রমবৃদ্ধিতে, অন্য মানুষের প্রতি আচরণের অস্বাভাবিকতায় আজ আমরা মুখোমুখি নতুন সংকটের। তবে এই সংকটে আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, বিশ্বাস করি মানুষের কাছে গিয়ে, মানুষের হাতে হাত রেখে সবার সাথে মিলবার, চলবার, গাইবার সাধনাই মানুষকে আবার ফিরিয়ে আনবে মানুষের কাছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনায় আমাদের যুক্ত হতে হবে।
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার শক্তিতে বাঙালি মনুষ্যত্বের জয়গান গাইবে, উচ্চারণ করবে, “কত শতাব্দী করেছি মা পাপ মানুষেরে করি ঘৃণা, জানি মা মুক্তি পাব না তাহার প্রায়শ্চিত্ত বিনা, পরম প্রত্যয়ে বলবে হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো মনটা করো পরিষ্কার।” মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে সার্থক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আঁধার রজনী শেষে নবীন আলোয় নবীন আশায় নবীন জীবন লাভ করে সুদিনের পথে চলব আমরা, বাঙালিকে বলব, নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়।’