জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত একক বক্তৃতায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। ঢাকা, ১৬ অক্টোবর
জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত একক বক্তৃতায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। ঢাকা, ১৬ অক্টোবর

গণতন্ত্রকে নির্বাচনে সীমাবদ্ধ রাখলে প্রকৃত গণতন্ত্র পাওয়া যাবে না: সলিমুল্লাহ খান

গণতন্ত্রকে শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে প্রকৃত গণতন্ত্র পাওয়া যাবে না। গণতন্ত্রের গভীর অর্থ রয়েছে। শাসনব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে সর্বসাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত একক বক্তৃতায় অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এই অভিমত দিয়েছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবে কবিতা’ শীর্ষক এই একক বক্তৃতা ও কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

একক বক্তৃতায় সলিমুল্লাহ খান গণতন্ত্রের সংজ্ঞা, ফরাসি বিপ্লবের পটভূমি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসের চুম্বক অংশ তুলে ধরেন। এসব আন্দোলনে কবিদের অংশগ্রহণ, তাঁদের কবিতা কীভাবে আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে, জনগণকে উজ্জীবিত করেছে, তারও চিত্তাকর্ষক বিবরণ দেন। স্মৃতি থেকে দেশ-বিদেশের অনেক কবিতার চারণ উদ্ধৃত করে এবং বই থেকে পাঠ করে শোনান।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, কবিতার সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক হলো কবিতা সর্বসাধারণের জন্য লেখা হয়। কবিতা শব্দকে অর্থময় করে। শব্দ কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। শব্দ সর্বজনীন। কবিতা জনমানসের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সহায়তা করে। গণতন্ত্রও তেমনি সর্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সফল হয়ে ওঠে।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে ভালো অর্থ হলো জনগণের সর্বাত্মক অধিকার। সেই অর্থে সবচেয়ে ভালো গণতন্ত্র হলো সমাজতন্ত্র। কারণ, সেখানেই সমাজের সবার সম–অধিকার নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। আর ফ্যাসিবাদী গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায়, তা হলো গুম, খুন, জনগণের বাক্‌স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া আর তথাকথিত নির্বাচনের নামে জোর করে ক্ষমতা দখল করে রাখা। যেমন গণতন্ত্রের নজির সৃষ্টি করেছিল বিগত সরকার।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ছাত্র-জনতার বহু প্রাণের বিনিময়ে যাকে (হাসিনা সরকার) ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা হয়েছে। কাজেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, ফ্যাসিবাদের কাজ হচ্ছে শব্দকে অর্থহীন করা। আর কবিতার কাজ হচ্ছে শব্দকে আরও গভীরভাবে অর্থময় করে তোলা। সার্বিক অর্থে মানুষের সৃজনশীল কাজই হচ্ছে কবিতা। আজ গণ-আন্দোলনে ফ্যাসিবাদকে অপসারিত করা সম্ভব হয়েছে বলেই এখানে কবিতা নিয়ে মুক্ত পরিবেশে আলোচনা করা যাচ্ছে। এই মুক্ত পরিবেশ যেন বজায় থাকে, স্বৈরতন্ত্র যেন আর গণতন্ত্রকে অর্থহীন করে তুলতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রকৃত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্যসচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কবিদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কবিরা তাঁদের কবিতায় বিপ্লবের পাটাতন তৈরি করেছেন। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক কবির কবিতা প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, স্বৈরশাসনের পতনের পর মন্ত্রী, এমপি, দুর্নীতিবাজ আমলাদের মতো সুবিধাভোগী কবিরাও পালিয়ে গেছেন। তাঁদের আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবিতা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কবি শাহিন রেজা। আলোচনার পর ছিল কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে কবি মতিন বৈরাগী, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, নুরুল ইসলাম, কামার ফরিদসহ প্রায় অর্ধশত কবি তাঁদের কবিতা পাঠ করেন।