জামিন আবেদনে তথ্য গোপন করায় আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তির জামিনাদেশ প্রত্যাহার (রিকল) করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে টাঙ্গাইলের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ আদেশ দেন।
ওই মামলায় ২০ নভেম্বর রুল দিয়ে সহিদুরকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। সহিদুর ২২ নভেম্বর কারামুক্ত হন। এর আগে আপিল বিভাগ গত ২৭ আগস্ট এক আদেশে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই দ্রুত বা সম্ভাব্য ছয় মাসের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন। এ তথ্য গোপন করার বিষয়টি নজরে এলে শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ ওই আদেশ দেন।
আপিল বিভাগের আদেশের তথ্য গোপনসহ সহিদুরের জামিন আবেদন ঘিরে কিছু অসংগতির অভিযোগ তোলে রাষ্ট্রপক্ষ, যা ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে উপস্থাপিত হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত আদেশের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন রাখেন। আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে। আজ আদালতে সহিদুর রহমানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম এ মুনতাকিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।
শুনানির একপর্যায়ে জামিন আবেদন দায়েরকারী (ফাইলিং ল’ইয়ার) আইনজীবী মো. জাকারিয়া হাবিবকে আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়। মধ্যাহ্নবিরতির পর তাঁর বক্তব্য শোনেন আদালত। পরে ওই আদেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বিচার শেষ করতে আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশের তথ্য জামিন আবেদনে গোপন করা হয়েছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আবেদনকারীর পক্ষের দেওয়া নোটিশে টাঙ্গাইলের পরিবর্তে ঢাকা জেলা উল্লেখসহ অসংগতি রয়েছে। তথ্য গোপন করায় সহিদুরের জামিন মঞ্জুর করে ২০ নভেম্বর যে আদেশ হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ সহিদুরের জামিন বাতিল হলো। তথ্য গোপন ও জেলার নাম নিয়ে নোটিশে অসংগতির প্রক্ষাপটে জামিন আবেদন দায়েরকারী আইনজীবীকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।’
সহিদুরের আইনজীবী এম এ মুনতাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে না আনা তথ্য গোপন হিসেবে বিবেচনা করেছেন আদালত। আপিল বিভাগ ছয় মাসের মধ্যে মামলাটির বিচার শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্ধারিত এই সময়ের পর সহিদুরের জামিন প্রশ্নে রুল শুনবেন বলেছেন আদালত।’
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এ মামলায় আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পাসহ ১৪ আসামি রয়েছেন।