ভক্তি পর্যায়ের আত্মনিবেদনের গানের সুরে সুরে শুরু হলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর আয়োজন। সংস্কৃতিচর্চাকেন্দ্র ছায়ানটের তিন দিনের আয়োজনের প্রথম পরিবেশনা ছিল ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে/ প্রদীপ–শিখা সম কাঁপিছে প্রাণ মম’ সম্মেলক নৃত্যগীত।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে শুরু হওয়া তিন দিনের উৎসবের প্রথম দিনের প্রথম ভাগ ছিল কথন পর্ব। এ পর্বে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘সৃষ্টির নেশায় উন্মত্ত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে এ আয়োজনের মূল কথা মানবতার জয়গান। এই প্রজন্ম অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, কারণ তাদের এবং অগ্রজ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিপুল উদ্দীপনায় এই বিশেষ দিন উদ্যাপনের সাক্ষী হচ্ছি আমরা।’
বিশেষ বক্তব্যে বেগম আকতার কামাল বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের ক্ষুদ্র জীবনের সীমাকে অতিক্রম করে অসীমের দিকে নিয়ে যান, নজরুল সীমাটাকেই ভেঙে দিতে চান। তাই দুজনই আমাদের মনে সমানভাবে স্থান করে নেন।’ সামাজিক পদবিন্যাসের বহু স্তরকে ভেঙে কাজী নজরুল মানুষের মধ্যে সাম্য তৈরি করতে চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন বেগম আকতার কামাল। তিনি তাঁর বক্তব্যে জানান, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ করার জন্য প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়েছে। এ সময় বিদ্রোহী কবিতাটি লেখার ঘটনা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে গিয়ে নজরুলের নিজের কণ্ঠে এ কবিতা শোনানোর ইতিহাসটি বর্ণনা করেন আকতার কামাল।
ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের জীবনদর্শনের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের। আমাদের আত্মপরিচয় জানতে হলে বারবার ফিরে যেতে হয় কাজী নজরুল ইসলামের কাছে।’
উৎসবের স্বাগত কথন পর্বের পর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান ‘নবরাগ মালিকা’–এর ওপর গীতিনৃত্যালেখ্য। নজরুলসৃষ্ট রাগ নবরাগ মালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে এই নাম। পরিবেশনার মাঝেমধ্যে ছিল ত্রপা মজুমদারের কথন। তিনি কখনো বর্ণনা করেছেন গান সৃষ্টির ইতিহাস, কখনো তুলে ধরেছেন সেই সংগীত প্রথম পরিবেশনের গল্প।
একক গান নিয়ে কখনো বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী গেয়ে শোনান ‘দোলন চাঁপা বনে দোলে’, কখনো জান্নাত এ ফেরদৌসির কণ্ঠে উঠে আসে ‘বন–কুন্তল এলায়ে বন’। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে শিল্পী ফেরদৌস আরা শোনান ‘কেন বাজাও বাঁশি কালো শশী মৃদু মধুর তানে’ গানটি।
এবারের নজরুল উৎসবে ৩০ জনের মতো আমন্ত্রিত অতিথিসহ অংশ নিচ্ছেন প্রায় ১৬০ জন শিল্পী। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে একক গানের সঙ্গে ছিল একক আবৃত্তি এবং সম্মেলক নৃত্যগীত পরিবেশনা। শনিবার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হবে বরেণ্য শিল্পী সন্জীদা খাতুনের গ্রন্থনায় গীতি–আলেখ্য ‘সজল শ্যাম ঘন দেয়া’।