কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষ–সংঘাতে নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও সাতটি মামলার তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা ও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ও গত রোববার রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এসব মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর কদমতলী থানায় দুটি, যাত্রাবাড়ী থানায় একটি, উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি ও মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারা দেশে ১২২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলার সংখ্যা ১১১।
এসব মামলার আসামির তালিকায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় অভিযোগ, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিরীহ ছাত্র–জনতার ওপর নির্বিচার গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে সবাই মারা গেছেন।
হৃদয় (২৭) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান সজলসহ ৮৭ জনকে আসামি করে কদমতলী থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। রোববার এ মামলা করেন হৃদয়ের মা মরিয়ম বেগম। মামলায় বলা হয়, ১৯ জুলাই রায়েরবাগ পদচারী–সেতুর কাছে হৃদয়কে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় ইমরান হোসেন (১৯) নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৯৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। রোববার এ মামলা করেন ইমরানের মা কোহিনূর আক্তার। মামলায় বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে ৫ আগস্ট বিকেলে কুতুবখালী এলাকায় নিরীহ ছাত্র–জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি, পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তখন গুলিবিদ্ধ হন ইমরান। পরে ইমরানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া ইলিয়াস নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন তাঁর বাবা আবদুল্লাহ করিম। মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদসহ ১০৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইলিয়াস খুন হন ৪ আগস্ট।
নাসির হোসেন (৩৯) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা হয়েছে। নাসিরের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল এ মামলা করেন।
সাগর (১৯) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ ৩৭৩ জনের বিরুদ্ধে গতকাল উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়েছে। সাগর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ৫ আগস্ট।
আল শাহরিয়ার হোসেন নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে গতকাল মোহাম্মাদপুর থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। শাহরিয়ার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ১৯ জুলাই।
এর বাইরে রবিন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে রোববার কদমতলী থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় রবিনের বাবা আবদুল করিম দাবি করেন, ১৯ জুলাই রায়েরবাগে তাঁর ছেলে রবিনকে গুলি করা হয়। সেদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ নির্বিচার গুলি করে। পরে রবিনকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।