কক্সবাজারে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত জুলাই মাসে ২৫০ শয্যার সরকারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩১৩ জন ডেঙ্গু রোগী। আর গত আগস্ট মাসে ভর্তি ছিলেন ৯৯৯ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিন গুণের বেশি। গত তিন মাসের পরিসংখ্যান হিসাব করলে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩২ গুণের বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, গত আগস্ট মাসজুড়ে ভারী বর্ষণের কারণে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ডেঙ্গুর মৌসুমও শুরু হয়েছে। এ কারণে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৪ জনের বেশি। আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৮৮ জন। এর মধ্যে ১৪ জন শিশু, ২৬ জন নারী ও ৪৮ জন পুরুষ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও চিকিৎসকেরা বলছেন, পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে এক মাস ধরে ঠিকমতো ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। পাশাপাশি বৃষ্টির সময় নালা–নর্দমায় জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে। ভারী বর্ষণের কারণে শহরের অনেক স্থানে এখনো পানি জমে আছে। সেখানে এডিস মশা বংশবিস্তার করছে। পৌরসভার কাউন্সিলররা না থাকায় থমকে আছে কার্যক্রম। এ কারণে মশকনিধনেও কোনো পদক্ষেপ নেই।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক রোগী ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ ১৫টি ওয়ার্ডে মঙ্গলবার ভর্তি ছিলেন ৮২৩ জন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৮২৭ জন। আর হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৮৮ জন রোগী। এর মধ্যে শিশু ১৪ ও নারী ২৬ জন। বেশির ভাগ রোগী শহরের ওয়ার্ডের পাহাড়তলী, আদর্শগ্রাম, কলাতলী, লারপাড়া, ঘোনাপাড়া, বৈদ্যঘোনাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে এসেছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত সাত বছর বয়সী এক মেয়েশিশুকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন শহরের ঘোনাপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলাকার সড়কের পাশের নালাগুলো খোলা পড়ে আছে। মাসে একবারও পরিষ্কার করা হয় না। সেখানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লারভা জন্ম নিচ্ছে। তাতে এলাকার নারী–শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘরে মশারি টাঙিয়েও মশার কামড় থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করা যাচ্ছে না।
শহরে ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জানিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও শহরের জলাবদ্ধতার কারণে মশার বংশবিস্তার ঘটছে। এ কারণে আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে কয়েক গুণ।
পৌরসভার বড়বাজার, বাজারঘাটা, বৈদ্যঘোনা, ঘোনাপাড়া, টেকপাড়া, তারাবনিয়াছড়া, আলীরজাহাল, ঝাউতলা, লালদিঘির পাড়, এন্ডারসন সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ২০টির বেশি সড়কের পাশে নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরে আছে। কিছু এলাকায় সড়কের পাশেও আবর্জনার স্তূপ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল ও সন্ধ্যার দিকে মশার উৎপাত বেড়ে যায়। তখন ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়ে। ময়লা–আবর্জনার দুর্গন্ধ ঘরে থাকা যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওই দিন থেকে পৌরসভার মেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিল আত্মগোপন করেন। এর পর থেকে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো তদারকি হচ্ছে না। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।