শরতের কোনো এক শান্ত দুপুরে রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা বাড়ি আপনার চোখে পড়ল, ছিমছাম শান্ত একটা বাসা। দেখেই হয়তো মনে হলো—আহা, এ রকম একটা বাড়ি কি আমার হবে না কোনো দিন?
নিজের একটা বাড়ির স্বপ্ন সবারই থাকে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রেই এই সংকট বেশি দেখা যায়। স্বস্তির ব্যাপার হলো, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক বাড়ি কেনা বা বানানোর জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়। এই ঋণ কীভাবে নিতে হবে? নেওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা দরকার? ঋণের জন্য কী কী কাগজপত্র লাগে? চলুন জানা যাক।
প্রথমেই জানা দরকার কী পরিমাণ লোন আপনি ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর শর্ত থাকে ৭০ বনাম ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, আপনি ১ কোটি টাকা বাজেটে ফ্ল্যাট বা জমি কেনেন অথবা বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করতে চান, সে ক্ষেত্রে ৭০ লাখ টাকা আপনাকে ব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে। বাকিটা আপনাকে বহন করতে হবে।
ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানভেদে এই হিসাব ভিন্ন হয়ে থাকে। বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ নিতে হলে বিবেচনায় রাখতে হবে বয়সও। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল ফজল জানান, ঋণ পেতে হলে ঋণগ্রহীতার বয়স ২৫ থেকে ৬৫ বছর হতে হবে। চাকরিজীবীদের মাসিক আয় হতে হবে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। ঋণ নেওয়ার এই সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ী এবং বাড়িওয়ালারাও।
অনেকেই মনে করেন, যেকোনো ব্যাপারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গেলে কাগজপত্রজনিত জটিলতা পোহাতে হয়। ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। একটু নিয়ম মেনে চললে এবং কাগজপত্র ঠিকঠাক রাখলে সহজ শর্তে যেকোনো ঋণ পাওয়া যায়।
ফ্ল্যাট বা জমির ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে। লাগবে জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূল কপি এবং বরাদ্দপত্র লাগবে। বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য প্রথমেই দরকার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নকশার সত্যায়িত ফটোকপি, মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান এবং খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি। আরও লাগবে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি।
এ ছাড়া লাগবে জেলা বা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি) এবং সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে লাগবে মূল বরাদ্দপত্র ও দখল হস্তান্তরপত্র।
ফ্ল্যাট বা জমি কেনার সময় অনেকেই মর্টগেজ ঋণ বা বন্ধকি ঋণ নিয়ে থাকেন। ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে স্থায়ী সম্পদ জামানত রেখে তার বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করাকেই বলা হয় বন্ধকি ঋণ। এই ঋণ সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নেওয়া হয়। যার মেয়াদকাল ৫ থেকে ২০ বছর কিংবা তার বেশি হতে পারে। মর্টগেজ লোনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছে স্থায়ী সম্পদ জামানত হিসেবে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত জামানত হচ্ছে জমির দলিল। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বা কোনো স্থায়ী সম্পদ কেনার উদ্দেশ্যে মর্টগেজ লোন নিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব রিটেইল ল্যান্ডিং মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অন্যান্য হোম লোনের সঙ্গে আরেকটি লোন আছে, সেটি হচ্ছে অ্যাফোর্ডেবল হোম লোন। ব্র্যাক ব্যাংক এখন অ্যাপার্টমেন্ট পার্চেস, নিজের জায়গায় বাড়ি নির্মাণের জন্য এবং সেমি পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন দিয়ে থাকে।’
মর্টগেজ লোন নেওয়ার জন্য যে জমিটি কেনা হয়েছে, তার দলিল জমা রেখে সাধারণত লোন নেওয়া যায়। এই লোন নিয়ে অনেকে বাড়ির কাজ সেরে ফেলেন। পরে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করেন।
মর্টগেজ লোন নিতে প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদনের সময় কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ঋণ পাওয়ার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ে আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গত এক বছরের ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ইউটিলিটি বিলের কপি, গত এক বছরের ব্যাংক বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, জামিনদারের কাগজপত্র, বন্ধকযোগ্য সম্পদের দলিলপত্র, যন্ত্রপাতি হলে মালিকানা সাপেক্ষে প্রমাণপত্র, স্যালারি সার্টিফিকেট ইত্যাদি।