প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে আপনাদের লেখা। আপনিও পাঠান। গল্প-কবিতা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা। আপনার নিজের জীবনের বা চোখে দেখা সত্যিকারের গল্প; আনন্দ বা সফলতায় ভরা কিংবা মানবিক, ইতিবাচক বা অভাবনীয় সব ঘটনা। শব্দসংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০০। দেশে থাকুন কি বিদেশে; নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়: readers@prothomalo.com
বেশ কিছুদিন আগে ঢাকার আশুলিয়ায় এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় রাতের বেলায় গিয়েছিলাম দাওয়াত খেতে। আরও অভিন্ন বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন থাকায় দাওয়াতটা মজলিশে পরিণত হয়েছিল।
খাওয়াদাওয়ার পর চা–পান, তাম্বূল সেবন এবং জম্পেশ আড্ডা। সময়টাও হারিয়ে গিয়েছিল কাকলিমুখর পরিবেশে।
রাত যখন বেশ গভীর, তখনই সবাই সংবিৎ ফিরে পেল। বাড়ি ফিরতে হবে। রাত সাড়ে ১২টায় সবাই যার যার বসতবাড়িতে ফেরার জন্য রওনা দিল।
আমি স্বচালিত শকটে সাভারের কাছাকাছি আসার পর পেছনের একটি চাকা ফটাস করে হাওয়াশূন্য হলো।
টুলবক্স থেকে জ্যাক-হাতুড়ি বের করে স্পেয়ার চাকা লাগাতে গিয়ে দেখি, সেটির অবস্থা ভালো নয়। আমি এমনিতে ঘর্মাক্ত থাকি। ঘুটঘুটে অন্ধকারে স্নায়ুর চাপ বাড়লেও নড়বড়ে স্পেয়ার চাকাটা লাগিয়েই গন্তব্যে পৌঁছাব—এমন সিদ্ধান্ত যখন নিলাম, তখন দুজন ধূমপানরত তরুণ এসে বলল, কী হয়েছে স্যার? বললাম, এই অবস্থা। ওরা নির্দ্বিধায় বলল, ‘আপনার মূল চাকা ও স্পেয়ার চাকা, দুটিই নিয়ে যাচ্ছি; আধঘণ্টার মধ্যেই ঠিক করে আনব।’
আমি অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ভাবলাম, চাকা দুটিই গেল আরকি। প্রাণটা তো বাঁচল!
জনমানবশূন্য নিশীথে আয়াতুল কুরসি পড়ে বিপদমুক্ত হতে চাইছি।
২০ মিনিট পর গাঢ় অন্ধকারের মধে৵ মানুষের ছায়া দেখতে পেলাম। শঙ্কিত হয়ে ভাবলাম, এবার গাড়িসহ আমাকে গায়েব করে ফেলা হবে।
ছায়াযুক্ত মানবকায়া কাছে আসার পর দেখলাম, ওই দুই তরুণ। বলল, আর ১৫ মিনিট পর মেরামতযুক্ত আপনার চাকা দুটো আসবে।
আমি ভয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলছি না দেখে ওরা বলল, নির্ভয়ে থাকুন।
ছেলে দুটোর বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম। ২৫ বছরের কাছাকাছি হবে। কাপড়চোপড় বেশ সাধারণ। কথাবার্তায়ও তা–ই।
হাওয়াযুক্ত দুটি চাকা এল ওদের পরিচিত দোকান থেকে কর্মচারীর মাধ্যমে। মূল চাকাটি কর্মচারী তার দক্ষ হাতে লাগিয়ে টুলবক্সসহ স্পেয়ার চাকাটি আমার শকটের পেছনে সযত্নে রেখে বলল, ‘এবার স্যার আপনি নিশ্চিন্ত মনে বাসায় যান।’
আমি দোকানের কর্মচারীকে বকশিশসহ এক হাজার টাকা এবং আমাকে বিপদমুক্তকারী দুই তরুণকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি; ঠিক ওই সময় দুই তরুণ তাদের দেওয়া দুই হাজার টাকা এবং দোকানের কর্মচারীকে দেওয়া এক হাজার টাকা আমার পকেটে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, ‘রাত প্রায় শেষ, আপনি যান। দোকানের টাকা আমরা দিয়েছি এবং আমরা আপনার মতো একজন মুরব্বিকে বিপদের সময় সহযোগিতা করতে পেরেছি, এতেই ধন্য।’
আমি তাদের নাম জিজ্ঞেস করায় বলল, ‘আপনাকে নাম বললে আপনি হয়তো গণমাধ্যমে কাহিনি তুলে ধরবেন এবং আমাদের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করবেন।’ তাদের কথায় আমি রীতিমতো হতবাক হলাম। এরপর তারা অন্ধকারে মিশে গেল।
আমি একরাশ বিস্ময় নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় আমার পূর্ব শেওড়াপাড়ার বাসার দিকে রওনা হলাম।
মোবিন-উল-হক, পূর্ব শেওড়াপাড়া, জামতলা মসজিদ মোড়, কাফরুল, ঢাকা