৬ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি চলতি বছরে বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে স্থান পেয়েছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সানজিদা ইসলাম। এই কলেজছাত্রী বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রমেশ কুমার।
বিবিসির তালিকায় আপনার নাম আসার খবরটি কীভাবে পেয়েছেন?
সানজিদা: বিবিসি থেকে ফোনে জানিয়েছে।
তারপর প্রথম কাকে জানালেন?
সানজিদা: মাকে। মা পাশেই ছিলেন।
আপনার মা খবরটি শুনে কী বলেছিলেন?
সানজিদা: তিনি অনেক খুশি হন।
বাবা?
সানজিদা: বাবা ঢাকায় চাকরি করেন। তাঁকেও ফোনে জানাই। তিনিও অনেক খুশি।
যে কাজের জন্য আপনি স্বীকৃতি পেয়েছেন, সেটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ। এই কাজ কেমন চলছে?
সানজিদা: আমার গ্রাম (নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া) এখন বাল্যবিবাহমুক্ত। মুরব্বিরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিশান টানিয়ে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বিবিসির তালিকায় আপনার নাম আসার খবরে গ্রামবাসী কিছু বলেছে?
সানজিদা: গ্রামবাসী আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
আপনার সঙ্গে আপনার ছয় সহপাঠী ছিলেন। তাঁরা এখন কোথায়?
সানজিদা: সবাই পড়াশোনা করে।
ঘাসফড়িং নামে আপনাদের যে সংগঠনটি ছিল, সেটির কী অবস্থা?
সানজিদা: করোনা, নিজেদের পড়াশোনা, পরিবারের অন্য জায়গায় চলে যাওয়াসহ নানা কারণে সংগঠনটি কার্যকর নেই। তবে আমরা যাঁর যাঁর জায়গা থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করি।
সর্বশেষ কবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছেন?
সানজিদা: তারিখ ঠিক মনে নেই। এ বছরই আমার এক আত্মীয়ের মেয়ের বাল্যবিবাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জানতে পেরে আমি প্রশাসনকে জানাই। তখন প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিয়েটি বন্ধ হয়। কিন্তু মাস দুয়েক পরে অন্য জায়গায় নিয়ে মেয়েটিকে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়।
এই যে আপনি প্রশাসনকে বাল্যবিবাহের খোঁজ জানান, কেউ কিছু বলে?
সানজিদা: কেউ কেউ বাবা-মাকে ফোন করে বলেন, আপনার মেয়েকে থামান। তবে আমার পরিবার তাতে কান দেয় না।
গোপনে হওয়া বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে করণীয় কী?
সানজিদা: কাজিদের সক্রিয় হতে হবে এবং তাঁদের জবাবদিহি দরকার। কারণ, একটি মেয়েকে দেখলেই বোঝা যায় তাঁর বয়স কত। জন্মনিবন্ধন সনদ ভুয়া কি না, সেটা স্কুলের সনদের সঙ্গে মেলালেই ধরা পড়ে। কাজিরা যদি সক্রিয় হন, বাল্যবিবাহ অনেকটাই কমে যাবে।
আবার বিবিসির তালিকা প্রসঙ্গে ফিরি। নাম ওঠার পর আপনার কেমন লাগছে?
সানজিদা: বলতে পারেন, নিজেকে অনেক দায়িত্বশীল বলে মনে হচ্ছে। মেয়েদের জন্য কিছু করার আরও তাগিদ অনুভব করছি।
বিবিসি আপনার খোঁজ পেল কীভাবে?
সানজিদা: আমাদের সংগঠন ঘাসফড়িং নিয়ে প্রথম আলো একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে প্রচার করেছিল। তারপর বিবিসি থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করার চিন্তাটি কোথা থেকে এল?
সানজিদা: আমার মায়ের বিয়ে হয় দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়। বিয়ের পর মা নানা জটিলতায় পড়েন। আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বড় হয়ে এসব কথা শুনেছি। মাকে দেখে মনে হতো, একজন নারীর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ কীভাবে বাল্যবিবাহ নষ্ট করে। সেখান থেকেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আমার মনে একধরনের বিবমিষা তৈরি হয়।
আপনি এখন স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সানজিদা: ভালো করে পড়ালেখা শেষ করতে চাই। বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা আছে। আমার চাওয়া হলো, দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আন্দোলনের স্থায়ী কমিটি হোক।