দেশে ধারাবাহিকভাবে কমলার উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মাথাপিছু কমলা খাওয়ার পরিমাণ। চাহিদার কারণে কমলার আমদানিও বাড়ছে।
দেশে গত এক যুগে কমলার উৎপাদন ১০ গুণ বেড়েছে। এই সময়ে কমলার আমদানি বেড়েছে পাঁচ গুণ।
২০১০ সালে দেশে ৫ হাজার টন কমলা উৎপাদিত হতো। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টন।
অন্যদিকে, গত অর্থবছরে দেশে কমলা আমদানি বেড়ে আড়াই লাখ টন হয়েছে।
একসময় দেশে কমলা বিদেশ ফল হিসেবে গণ্য হতো। দেশে মাথাপিছু কমলা খাওয়ার পরিমাণও ছিল কম। যে কমলা মানুষ খেত, তার বড় অংশই বিদেশ থেকে আসত।
দেশে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের হাতে গোনা কয়েকটি বাগানে সবুজ কমলা উৎপাদিত হতো। কিন্তু এখন দেশে আম ও পেয়ারার পর সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে কমলার উৎপাদন।
দেশের অন্তত ৩৫টি জেলায় এখন কমলার চাষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে ২০ থেকে ২৫ জাতের কমলা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত জাত যেমন আছে, তেমনি আছে বিদেশি জাত।
গত এক বছরে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভারতের দার্জিলিং জাত ও চীনের ম্যান্ডারিন জাতের কমলার চাষ শুরু হয়েছে। এই সময়ে এই দুটি জাতের চাষ দ্রুত বাড়ছে।
দেশের তিন পার্বত্য জেলায় সারা বছর ফল দেবে—এমন জাত বারি-১১-এর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। প্রথম বছরেই চাষিরা ভালো ফলন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশে দেশি কমলার উৎপাদন পাঁচ শতাংশ হারে বাড়ছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে আম ও আনারসের পর কমলা চাষে নতুন বিপ্লব শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা কমলার জাত বাংলাদেশে সফলভাবে চাষ হচ্ছে। তাই কমলাকে এখন আর বিদেশি ফল বলা যাবে না। দেশের মানুষের নিত্যদিনের ফল খাওয়ার তালিকায় কমলার অন্তর্ভুক্তি জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ বিশ্বের কোন দেশে কী পরিমাণে কমলা হয়, কোন দেশ কী পরিমাণ কমলা আমদানি করে, তার হিসাবসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম প্রধান কমলা আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ কমলা আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ষষ্ঠ। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম।
ইউএসডিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমলা রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশ হলো—যথাক্রমে মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্ক।
কমলা উৎপাদনের দিক দিয়ে শীর্ষ তিনে রয়েছে ব্রাজিল, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। তবে এই দেশগুলোতে উৎপাদিত কমলার প্রায় পুরোটাই নিজেদের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
কমলার পাশাপাশি লেবুজাতীয় ফল মাল্টা ও কেনুর চাষ দেশে দ্রুত বাড়ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে।
বিশেষ করে বাড়ির পাশের ছোট জমি, বাগান, বাড়ির ছাদ ও বারান্দায় মাল্টা-কেনুর চাষ শুরু হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি জাত মিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার টন। একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৫৭ হাজার টন ফল।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বর্ষব্যাপী ফল উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদি মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেশে কমলা ও মাল্টার উৎপাদন আরও ৪০ হাজার টন বাড়াতে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছি। প্রকল্পটি সফল হলে দেশে কমলার আমদানি আরও কমবে। তখন দেশের মানুষ আরও সস্তায় কমলা খেতে পারবে।’