বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়

এটা মমতা ব্যানার্জির ধরনের বক্তব্য, সেভাবেই দেখতে চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে ‘তাঁর ধরনের একটি বক্তব্য’ হিসেবে দেখতে চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর আরজি জানাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন এ বিষয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করেন।

এদিকে আজ দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব, কেন্দ্র রাষ্ট্রপুঞ্জের (জাতিসংঘ) কাছে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর আরজি জানাক।’ এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাবও তিনি কেন্দ্র সরকারকে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যকে মমতা ব্যানার্জির ধরনের হিসেবে দেখতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি কেন এমন বক্তব্য দিলেন, আমরা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাঁর রাজনীতির জন্য বিষয়টি ঠিক হয়নি। পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চাই।’

এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার এবং আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে বলা হয়েছে, তাঁর অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে পেরেছেন। কারণ, এই স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী বৈশ্বিক প্রচারণা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আমরা মেনে নিচ্ছি, তাদের এ ক্ষেত্রে শক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। তবে আমরা সবাইকে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি।’

ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধানত ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার চাালানো হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক গণমাধ্যম ভারতীয় গণমাধ্যমকে উপজীব্য করে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তবে আমরা বলতে চাই, সব সরকারের আমলেই বছরে দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তবে সরকারের কাজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা সেটি করেছি। তবে দেশ ও দেশের বাইরে এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বার্তা দিতে চাই, বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক কোনো অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। আমরা হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদ করতে চাই না। কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের প্রতিবেদন একপেশে হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে সেখানে অবস্থানরত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষ প্রভাব রেখেছে। যুক্তরাজ্যে আওয়ামীপন্থী সাংসদের সংখ্যাও বেশি। তারা প্রতিবেদনকে প্রভাবিত করেছে। তারা আমাদের দূতাবাসকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।’