আদালতের রায় ও নির্দেশনা এবং শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে এখন নানা আলোচনা চলছে। তবে কোটা সংস্কার, পর্যালোচনা বা কোটার প্রয়োগের পদ্ধতি সহজ করার আলোচনা ও সুপারিশ বেশ পুরোনো। প্রায় দেড় দশক আগে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ বিষয়ে কিছু সুপারিশ করেছিল। আবার ছয় বছর আগে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি এ নিয়ে কিছু সুপারিশ করেছিল। বিভিন্ন গবেষণাও হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। সেগুলোতে নানাভাবে কোটা সংস্কার বা পর্যালোচনার কথা এসেছে। এ বিষয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের তৃতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশিত হলো।
প্রয়াত মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান ও সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনে কোটাব্যবস্থার ওপর গবেষণা করে তা কমানোর সুপারিশ করেছিলেন। ওই গবেষণায় বলা হয়, অগ্রাধিকার কোটা কোনোভাবেই মেধা কোটার চেয়ে বেশি হতে পারে না।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উদ্যোগে ওই গবেষণা করা হয়েছিল। যদিও সেই গবেষণার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সরকারি চাকরিতে ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় মূলত ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এসব চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ওই বছর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সব কোটা বাতিল করা হয়। তবে ১৪তম থেকে ২০তম গ্রেডে (মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) কোটা আগেও ছিল, এখনো আছে। যদিও প্রতিষ্ঠানভেদে এসব পদের কোটায় কিছু ভিন্নতা আছে।
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের একপর্যায়ে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে দেয় সরকার। এবার আন্দোলনকারীরা সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবি করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বলছেন, কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সময়ের বিবেচনায় সংস্কার করা উচিত।
তবে চাকরিতে কোটা সংস্কারের এ আলোচনা নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই তা করা হচ্ছে। পিএসসি একাধিকবার কোটা সংস্কার বা কোটার প্রয়োগ পদ্ধতি সহজ করার সুপারিশ করেছিল।
কোটা পর্যালোচনার জন্য পিএসসির উদ্যোগে ২০০৮ সালে আকবর আলি খান ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে নিয়ে করা একটি কমিটি গবেষণা করে। সেই গবেষণার সুপারিশে কোটা সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। আকবর আলি খান কোটা সংস্কারের বিষয়ে একাধিকবার বলেছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন, ২৫৮ ধরনের কোটা আছে। চাকরিতে এই কোটাব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার করা উচিত।
কোটার পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে ন্যায্যতা ও সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে সংস্কার করা দরকার বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তবে বিষয়টি যেহেতু উচ্চ আদালতের বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি তিনি।