একজন কর্মী একবার গিয়ে আট মাস থাকতে পারবেন। ছুটিতে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া দেবেন নিয়োগকর্তা।
মাসে বেতন দেড় লাখ টাকার বেশি। কোরিয়ান ভাষা শেখা ও কারিগরি জ্ঞানের বাধ্যবাধকতা নেই।
সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে খণ্ডকালীন কর্মীর চাহিদা আসছে নিয়মিত। নিয়োগকর্তার খরচে আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া ও উচ্চ বেতনের সুযোগ আছে দেশটিতে। তবে অনুমোদন জটিলতায় দেশটিতে কর্মী পাঠাতে পারছে না বেসরকারি খাতের রিক্রুটিং এজেন্সিরা। একটি এজেন্সি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়নের পর অনুমোদন পেলেও ভিসা জটিলতায় কোনো কর্মী পাঠাতে পারেনি।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার পাশাপাশি দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে কৃষি খাতে কর্মী নেয় কোরিয়া। এর জন্য ওই দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মী পাঠানো দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে হয়। এখন দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের আলোচনা চলছে।
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ, সবজি বাগান ও বাজারজাতকরণ, শূকর পালনের মতো কাজে খণ্ডকালীন কর্মী নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপাইন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসব খাতে কর্মী যাচ্ছে এখন। গত বছর দুই হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর চাহিদা পেয়েছিল বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি কেএম ইন্টারন্যাশনাল। তারা আগ্রহী কর্মীদের কাছ থেকে ৭০০ কর্মীর পাসপোর্ট জমা নেয়। এরপর দুই দফায় ৮০ জন কর্মীর চাহিদাপত্রের বৈধতা যাচাইয়ের পর তা সত্যায়ন করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখা। এর ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে কোরিয়ার দূতাবাস কোনো কর্মীর ভিসা দেয়নি। কারণ, কর্মীর নিয়োগপত্র ছিল ৯০ দিনের জন্য। এ ক্ষেত্রে তাদের সি-৪-৫ ভিসার প্রয়োজন হয়। এটি মাত্র তিন মাসের জন্য, যা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কাউকেই দিচ্ছে না কোরিয়া। খণ্ডকালীন কর্মীর জন্য ই-৮ ভিসা অনুমোদন করে কোরিয়া। এতে আট মাস কাজ করার সুযোগ পান একজন কর্মী। কিন্তু এ ভিসার জন্য দেশটির স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে চুক্তি থাকতে হবে।
কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করার বিষয়ে কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মিকন তংচঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সরেজমিন নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। সব কাগজপত্র যাচাই করে চাহিদাপত্রের সত্যায়ন করেছেন। ভিসার বিষয়টি সত্যায়ন করেননি। কর্মী পাঠাতে হলে ই-৮ ভিসা লাগবে। এর জন্য কোরিয়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। এখন মন্ত্রণালয় তা নিয়ে কাজ করছে।
কেএম ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে তারা দফায় দফায় আলোচনা করেও কর্মী পাঠানোর বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি। তাই আগ্রহী কর্মীদের জমা নেওয়া পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। কোরিয়ার নিয়োগকর্তারা এখনো যোগাযোগ করছেন। ১৫ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে। এখন চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।
এদিকে কর্মী নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে কোরিয়ার হামপিয়াং-গুন স্থানীয় সরকার। ওই প্রতিষ্ঠানকে কোরিয়ায় খণ্ডকালীন কর্মী পাঠাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি হোপ হিউম্যান রিসোর্সেস। তারা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। তবে কোরিয়ার নিয়মের কারণে কর্মী পাঠাতে পারছে না তারাও।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে, গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন খাতে কাজ করতে গেছেন ৪ হাজার ৯৯৬ জন কর্মী। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮০৪ জনকে পাঠিয়েছে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)। সামান্য কিছু কর্মী গেছেন বেসরকারি খাতের রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে।
বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষি খামার খাতে প্রচুর কর্মীর চাহিদা আছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এসব কাজ মূলত খণ্ডকালীন। একজন কর্মী একবার গিয়ে আট মাস থাকতে পারবেন। এরপর তিন মাসের ছুটি কাটিয়ে আবার গিয়ে আট মাস কাজ করতে পারবেন। ছুটিতে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া দেবেন নিয়োগকর্তা। মাসে বেতন দেড় লাখ টাকার বেশি। কোরিয়ান ভাষা শেখা ও কারিগরি জ্ঞানের বাধ্যবাধকতা নেই। তাই কর্মীরা বেশি আয়ের আশায় যেতে চান দেশটিতে। তবে এক বছরের নিচে কোনো চাকরির জন্য ভিসা দিচ্ছে না কোরিয়ার দূতাবাস। তাই আটকে আছে খণ্ডকালীন কাজে কর্মী পাঠানো।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান) খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কোরিয়ায় খণ্ডকালীন কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ নিয়ে শিগগিরই একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হবে। এ সভায় আলোচনার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কোরিয়ায় কৃষি খাতে কাজের সুযোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে ভালোভাবে যাচাই–বাছাই করে দেখতে হবে। যেসব সুবিধা কর্মীদের দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কোরিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে কোনো ঝুঁকি যাতে তৈরি না হয়, তা–ও লক্ষ রাখতে হবে। কোনো কর্মী যেন প্রতারিত না হন।