শিক্ষার্থীরা দুই ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে তল্লাশি চালানোর পর তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যান। হাসপাতাল মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা
শিক্ষার্থীরা দুই ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে তল্লাশি চালানোর পর তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যান। হাসপাতাল মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা

ঢাকা মেডিকেলের দুই ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে শিক্ষার্থীদের তল্লাশি, পরে দুজনকে কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত একদল শিক্ষার্থী গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ উদ্দিন ও জিল্লুর রহমানের কক্ষে তল্লাশি চালান। এ সময় তাঁরা ওই দুজনের কক্ষে ধারালো অস্ত্র, মদের বোতল, বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ড ও পুলিশের সিল পাওয়ার কথা জানান। পরে দুজনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনার পর ওই দুই ওয়ার্ড মাস্টারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে আজ শুক্রবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ ওঠা দুই ওয়ার্ড মাস্টার সরকারি কর্মচারী। তাই সরকারি বিধি মোতাবেক তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামীকাল শনিবার তাঁদের কার্যক্রম শুরু করবে। তিনি বলেন, আর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাঁদের কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ উদ্দিন ও জিল্লুর রহমানের কক্ষে ঢোকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজের কক্ষে মদের বোতল, পুলিশ কেসের সিল, ধারালো অস্ত্র, আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ড, বেসরকারি হাসপাতালের ভিজিটিং কার্ড, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তালিকা পান। এ ছাড়া তাঁরা ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হাসপাতালে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ওয়ার্ড বয় নিয়োগ দেন বলে অভিযোগের সত্যতা পান।

তল্লাশিতে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, জরুরি বিভাগে যাঁরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। সেসবের সত্যতা নিশ্চিতে আমরা জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ উদ্দিনের রুমে অভিযান পরিচালনা করি। তিনি (রিয়াজ) স্বীকার করেছেন, রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠিয়ে প্রত্যেক রোগী থেকে ১ হাজার টাকা করে নেন।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তিন লাখ টাকা করে নিয়ে কাজে নিয়োগ দেন। সেই অভিযোগে তাঁকে ধরে নেওয়া হয় প্রশাসনিক ব্লকে। পরে জিল্লুর রহমান টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এরপর তাঁকেও আনসার সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া নতুন ভবন থেকে আরও একজনকে আটক করা হয়।

শিক্ষার্থীরা পরিচালকের কাছে অভিযোগের সঠিক তদন্ত দাবি করেন এবং তাঁদের বরখাস্তসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

পরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান হাসপাতালের মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আপনারা যেসব জিনিস তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন, সেগুলো আমাদের কাছে জমা দিয়ে যান। আমরা একটি কমিটি করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেই ব্যবস্থাই আমরা নেব।’