মোহাম্মদ ফেরদৌস মণ্ডল
মোহাম্মদ ফেরদৌস মণ্ডল

সময়ের মুখ

নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি, স্ত্রীকে পড়িয়েছি

দারিদ্র্যের কারণে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেই পড়াশোনা ছাড়তে হয় মোহাম্মদ ফেরদৌস মণ্ডলকে। শুরুতে সবজির ব্যবসা করেছেন। এখন চালান রিকশা। নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও স্ত্রী সীমানুর খাতুনের পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়েছেন, খরচ জুগিয়েছেন। স্ত্রী স্নাতকোত্তর (এমএ) শেষ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা প্রশাসন তাঁর চাকরির ব্যবস্থাও করেছে।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ি ঠিকাদারপাড়া গ্রামের রিকশাচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস মণ্ডলের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আনোয়ার পারভেজ

প্রশ্ন

কেমন আছেন?

ফেরদৌস: ভালো আছি।

প্রশ্ন

আপনার স্ত্রী যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, সেই খবর প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত কীভাবে পৌঁছাল?

ফেরদৌস: রিকশায় একজন যাত্রী (বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম) তুলেছিলাম। তিনি ডিসি অফিসে (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) নেমে যাওয়ার সময় লোকজন সালাম দিচ্ছিল। আমি ভাবলাম, তিনি বড় কর্মকর্তা। তাঁর কাছে স্ত্রীর জন্য একটি চাকরি চেয়েছিলাম।

প্রশ্ন

ওই ব্যক্তি কী বললেন?

ফেরদৌস: তিনি জানতে চাইলেন আমার স্ত্রী কী পাস। শুনেই তিনি চমকে ওঠেন। দুই দিন পর পত্রিকায় দেখি খবর ছাপা হয়েছে আমি ও আমার স্ত্রীকে নিয়ে।

প্রশ্ন

তারপর কী হলো?

ফেরদৌস: গত সোমবার ডিসি সাইফুল ইসলাম স্যার তাঁর অফিসে ডেকে নেন। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমার স্ত্রীর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন

স্ত্রীর চাকরির পাশাপাশি আপনাকে সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

ফেরদৌস: হ্যাঁ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার স্ত্রীর জন্য একটি ল্যাপটপ, ঋণ শোধের ২৫ হাজার টাকা, ঘর মেরামতের জন্য ৬ হাজার টাকা ও ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন

আপনার স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন। কেমন লাগছে?

ফেরদৌস: খুব খুশি। আমার স্ত্রী চাকরি করবেন। সংসারে আর অভাব থাকবে না। ছেলে দুটিকে ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে পারব।

প্রশ্ন

আপনার স্ত্রী কোথায় চাকরি পেয়েছেন?

ফেরদৌস: বগুড়া কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখায়।

প্রশ্ন

তিনি (স্ত্রী) কোথায় পড়াশোনা করেছেন?

ফেরদৌস: বাগবাড়ি শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি পাস (স্নাতক পাস) করার পর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এমএ পাস করেছে।

প্রশ্ন

আপনার সঙ্গে বিয়ের সময় কোথায় পড়তেন?

ফেরদৌস: নাংলু সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিমে পড়ার সময় আমার সঙ্গে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়।

প্রশ্ন

বিয়ের পর আপনার স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন?

ফেরদৌস: হ্যাঁ।

প্রশ্ন

আপনি সম্মতি দিয়েছিলেন কী মনে করে?

ফেরদৌস: নিজে তো পড়াশোনা করতে পারিনি, স্ত্রীকে পড়িয়েছি। তাকে উৎসাহ দিয়েছি, হতাশ করিনি।

প্রশ্ন

আপনি নাকি স্ত্রীকে রিকশায় কলেজে পৌঁছে দিতেন।

ফেরদৌস: রিকশায় নিয়ে যেতাম, আবার নিয়ে আসতাম। কিস্তির (ক্ষুদ্রঋণ) চাপ বেশি থাকলে বেশি সময় রিকশা চালাতে হতো। তখন স্ত্রীকে নিজে বাড়িতে দিয়ে যেতে পারতাম না, অটোতে (অটোরিকশা) উঠিয়ে দিতাম।

প্রশ্ন

সংসারে কাজের চাপ, দুই সন্তান লালনপালন, আপনার স্ত্রী পড়াশোনা করতেন কখন?

ফেরদৌস: দুই ছেলেকে নিয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়তাম, তখন আমার স্ত্রী কুপি বাতি জ্বালিয়ে পড়তে বসত।

প্রশ্ন

রিকশা চালিয়ে কত টাকা আয় হতো? তা দিয়ে কি সংসার চলত?

ফেরদৌস: দিনে ৪০০ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়ে চলা খুব কষ্ট। তার ওপর কিস্তির চাপ। আমার স্ত্রী প্রতিদিন ১০ টাকা করে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে পড়াশোনার খরচ মেটাত।

প্রশ্ন

কেউ পড়াশোনায় আর্থিক সহায়তা করেনি?

ফেরদৌস: স্ত্রীকে পড়াচ্ছি জেনে অনেকেই প্রশংসা করত। তবে সহায়তা করেনি।

প্রশ্ন

আপনার স্ত্রী কবে চাকরিতে যোগ দেবেন?

ফেরদৌস: ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চাকরি শুরু।

প্রশ্ন

তিনি কি খুশি?

ফেরদৌস: খুব খুশি। তবে তাঁর ইচ্ছা সরকারি চাকরি করার। সেই জন্য এখন প্রস্তুতি নেবে।