সানজিদা ও রায়হানের আক্‌দের এই ছবি মাত্র দুদিনের পুরোনো। দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগেই সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল রায়হানকে
সানজিদা ও রায়হানের আক্‌দের এই ছবি মাত্র দুদিনের পুরোনো। দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগেই সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল রায়হানকে

হাতের মেহেদি পুরোনো হয়নি, অথচ সব শেষ

গোলাপি রঙের শাড়ি পরে সানজিদা হোসেন তাকিয়ে আছেন স্বামী রায়হান উদ্দিনের দিকে। রায়হানের পরনে ঝলমলে কোটি আর পাঞ্জাবি। দুজনের আক্দ হয়েছে গত শুক্রবার। মাত্র দুই দিন আগের স্মরণীয় মুহূর্তটি ধরা পড়েছে ফ্রেমে। ছবিতে সানজিদা, রায়হান দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসছেন।

আজ রোববার রাতে সানজিদা যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন, তখনো তাঁর হাতের মেহেদি পুরোনো হয়নি। গোলাপি শাড়ি পড়া সানজিদার ছবিটাও কী ভীষণ জীবন্ত। কিন্তু দুই দিন আগের সুখের সেই ছবি এভাবে ভেঙে যাবে, তা কে জানত। কে জানত, স্বামীর লাশের সামনে দাঁড়াতে হবে তাঁকে।

আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের ডিসি পার্কের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সানজিদার স্বামী রায়হান উদ্দিন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রায়হান উদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা সাতটার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রায়হান উদ্দিনকে মেডিকেলে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রায়হান উদ্দিন

নিহত রায়হান নগরের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সহপাঠীরা। এ সময় তাঁর সতীর্থরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রাত আটটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, শোকে কাতর সানজিদা বিলাপ করছিলেন। কেবল বলছিলেন, ‘আল্লাহ কেন এমন করল।’ তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজন ও বন্ধুরা।

মেডিকেলের ইমার্জেন্সির সামনে তখনো অর্ধশতাধিক মানুষের ভিড়। তাঁরা সবাই নিহত রায়হানের স্বজন, শিক্ষক, বন্ধু-ভাই। তাঁর বন্ধু পার্থ প্রতিম নন্দী বলেন, ‘ওর ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। প্রায়ই খেলা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হতো। সে আমাকে সব সময় বলত “একদিন আমি স্পোর্টস সাংবাদিক হব।”’

রায়হানের আরেক বন্ধু তাপস বড়ুয়া বলেন, ‘শুক্রবার তাঁর আক্‌দে যেতে পারিনি। সেদিন রাতেও অনেক হাসিখুশি ছিল। কথা হলো তাঁর সঙ্গে। আজ সে নেই।’