মধ্য ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি তার দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে যুক্ত প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের কাজে নিতে আগ্রহী।
সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আলোচনার সময় হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যুক্ত প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের কাজে নেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত মাসের শুরুতে তৃতীয় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে হাছান মাহমুদ ব্রাসেলস সফরে গিয়েছিলেন। এর ফাঁকে তিনি হাঙ্গেরিসহ পাঁচটি ইউরোপীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন (রোসাটম) হাঙ্গেরিতে প্যাকস-২ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। আগে তারা দেশটিতে প্যাকস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছিল।
২ দশমিক ৪ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্যাকস-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে যুক্ত বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের কাজে নিতে আগ্রহী হাঙ্গেরি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি তুলেছিলেন হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো। রূপপুর প্রকল্পে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মীদের হাঙ্গেরিতে কাজে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন পিটার। তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রকল্পে যে প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে, একই ধরনের হাঙ্গেরির প্রকল্পটি করছে রোসাটম। ফলে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে যুক্ত দক্ষ প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরোধ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দক্ষ প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের নিয়োগের ব্যাপারে হাঙ্গেরির দেওয়া অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর এখান থেকে দক্ষ লোকদের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে আপাতত কোনো বাধা নেই।
রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। রূপপুরের এই প্রকল্পে কয়েক হাজার বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বিশেষায়িত জ্ঞান প্রয়োজন হয়। এই কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও শ্রমিকেরা বিশেষভাবে দক্ষ হন।
দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বৈতকর পরিহার ও বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহী হাঙ্গেরি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে সহযোগিতা বাড়াতে চায় হাঙ্গেরি। এ জন্য তারা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুটি প্রাথমিক চুক্তি করতে চাইছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
ব্রাসেলসের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) পাবে বাংলাদেশ। এরপর জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য ইইউর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে বাংলাদেশকে। হাঙ্গেরি ইইউর সদস্য। তারা বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।