গত দুই ছুটির দিনের তুলনায় গতকাল মেলায় ভিড় ছিল কম। তবে বিক্রি মন্দ হয়নি। নতুন বইও এসেছে ৯২টি।
প্রিয় লেখককে সামনে পেলে ভক্তরা খাতায় তাঁর স্বাক্ষর নেন। বইমেলায় লেখকেরা হাসিমুখে তাঁদের নতুন বইতে স্বাক্ষর দেন। এটাই প্রচলিত। এখন স্বাক্ষরের সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সেলফি তোলা। সবারই হাতে হাতে স্মার্টফোন। ফলে বইতে স্বাক্ষর দিয়ে লেখকদের এখন হাসিমুখে তাকাতে হয় সেলফোনের দিকে। ভক্তের অনুরোধ বলে কথা!
গতকাল রোববার সেই অবস্থায় দেখা গেল কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনকে। অনন্যা প্রকাশনীর স্টলে এসেছিলেন সন্ধ্যার খানেক আগে। অনুরাগীর দল ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। এখান থেকে তাঁর দুটি নতুন বই এসেছে শিশুতোষ চোর এসে গল্প করেছিল এবং ছোটগল্প অন্ধকার নামতে পারেনি। ভক্তদের কেনা বইতে স্বাক্ষর দেওয়ার পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই তাঁদের সঙ্গে সেলফি তোলার আবদার রাখতে হচ্ছিল তাঁকে।
এমনি এক ভক্তের পরিবার এসেছে মিরপুর থেকে। তরুণ ব্যবসায়ী ফজলুল করিম, স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও মেয়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাবিহা কণা। ফাতেমা বললেন, তিনি বহুদিন থেকে মিলনের ভক্ত। কাল কিনলেন আগের প্রকাশিত উপন্যাস প্রিয়দর্শিনী। মেয়ের জন্য কিনলেন গল্পের বই।
‘কোথায় প্যারা শেষ হবে, কোথায় নতুন শুরু হবে, কোথায় ‘কি’ আর কোথায় ‘কী’ হবে—এ ধরনের ন্যূনতম ধারণাও অনেক লেখকের নেই। মেলায় এমন লেখকদের শত শত বই প্রকাশ হচ্ছে। পাঠকেরা এসব বই কিনে পড়তে গিয়ে দেখছেন সেগুলো খুবই নিম্নমানের। এতে অনেকেরই আর পড়ার আগ্রহ থাকে না। ইচ্ছে হলো আর গাঁটের টাকা খরচ করে এক-দুইটি বই প্রকাশ করে মেলায় নিয়ে এলাম, এমন প্রবণতা বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করলেন ইমদাদুল হক মিলন। তিনি বললেন, বাংলা একাডেমির এ বিষয়ে এখন কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়েছে। পাশাপাশি লেখকদেরও লেখার বিষয় বৈচিত্র্য বাড়ানোর ওপর জোর দিলেন তিনি।
বইয়ে বিষয় বৈচিত্র্য এখন কমে গেছে। খুব জনপ্রিয় লেখকও যদি একই ধরনের বই যেমন উপন্যাস বা গল্প লিখে চলেন তবে পাঠকের কাছে একটা সময় তিনি বৈচিত্র্যহীন হতে পারেন। অতীতে অনেক জনপ্রিয় ও শক্তিমান লেখক এ কারণে হারিয়ে গেছেন। বিষয়ের বৈচিত্র্য যেমন লেখকের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে, তেমনি সামগ্রিকভাবে তা দেশের সাহিত্যসম্ভারও সমৃদ্ধ করে তোলে বলে মন্তব্য করলেন ইমদাদুল হক মিলন।
গত দুই ছুটির দিনের তুলনায় গতকাল মেলায় ভিড় ছিল কম। তবে বিক্রি মন্দ হয়নি। নতুন বইও এসেছে ৯২টি। প্রথমায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল প্রচুর। আসিফ নজরুলের উপন্যাস আমি আবু বকর কিনেছেন অনেকে। বিক্রিয় প্রতিনিধিরা জানালেন, দুই মুদ্রণ শেষে এখন তৃতীয় মুদ্রণ চলছে উপন্যাসটির। এ ছাড়া কাল সরদার ফজলুল করিমের প্রবন্ধ আমার পৃথিবী: দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, শিল্পী মুর্তজা বশীরের দুটি বই একুশের লেখা একুশের আঁকা এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: বাবার কাছে ফেরা: লেখা ও পত্রালাপ, আকবর আলি খানের দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বইগুলো ভালো বিক্রি হয়েছে। কাল নতুন এসেছে বিরূপাক্ষ পালের অর্থনীতিবিষয়ক বাংলাদেশের অর্থ খাত ও নীতি-অনীতির দ্বন্দ্ব।
এবার মেলার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে অ্যাডর্ন এনেছে ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশে শাসনকাজ পরিচালনা নিয়ে গবেষণাধর্মী বই সিরাজ উদ্দিন সাথীর আমলা পুরাণ, প্রতীক এনেছে জীবনানন্দ দাশের সাতাশ নম্বর কবিতার খাতা। বইটি সম্পাদনা করেছেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। আগামী এনেছে ড. আনোয়ার হোসেনের প্রবন্ধ শেখ মুজিব: বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু, চিরদিন এনেছে মুহম্মদ নূরুল হুদার কাব্য তিন ভুবনের অন্ধ, ঐতিহ্য এনেছে মামুন হুসাইনের প্রিয় ১৫ গল্প, বিশ্বসাহিত্য ভবন এনেছে ডা. মুহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের গল্প রক্তস্নাত ব্রহ্মপুত্র, পুঁথিনিলয় এনেছে বিলু কবীরের বই ভূত অদ্ভুত, বাংলা গবেষণা এনেছে কাজী জাওয়াদের প্রবন্ধ যুদ্ধ ও বিচ্ছিন্নতা, সংবেদ এনেছে মাসুমুল আলম অনূদিত গাড়িবোমায় নিহত বিখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি ও সাংবাদিক ঘাসান কানাফানির মেন ইন দ্য সান ও আকিমুন রহমানের প্রবন্ধ নিরন্তর পুরুষভাবনা, অঙ্কুর এনেছে চিকিৎসাবিষয়ক ব্যতিক্রমী বই আসিফ হাসান নবীর হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ।
মনজুরুল হক ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। প্রথমায় এসেছে তাঁর নতুন বই আমার জাপান জীবনের স্মৃতি।
লেখক জাপানের সব কটি জেলায় গেছেন। সাক্ষাৎ করেছেন সম্রাট থেকে রেলস্টেশনে বাস করা গৃহহীন পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। সমৃদ্ধ সেই অভিজ্ঞতারই নির্যাস এই বই। পড়তে শুরু করলে পাঠক তা শেষ না করে থাকতে পারবেন না।
মনজুরুল হক মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর এবং জাপানের রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে। জাপানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি যুক্ত আছেন সাংবাদিকতায়।
ঘরে বসে বইমেলার যেকোনো বই পেতে: ০১৭৩০০০০৬১৯