বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়
বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়

দীর্ঘজীবী হতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে উচ্চ রক্তচাপ

বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস ছিল গত শুক্রবার (১৭ মে)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। এ বছর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করছে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।

দিবসটি উপলক্ষে আগেরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আয়োজন করে এক অনলাইন আলোচনার। এতে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, জীবনযাপনে সুস্থ ধারা বজায় রাখা এবং সঠিক ওষুধ নিয়মিত গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব জেরিয়াট্রিক কার্ডিওলজির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. একে এম মনওয়ারুল ইসলাম, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার দত্ত, ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম, ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. এ এন এম মোমেনুজ্জামান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খালেকুজ্জামান, এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. আতাহার আলী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদউল্লাহ ফিরোজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সজল ব্যানার্জি, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) ডা. মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম এবং সহকারী ব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন।

এই আয়োজনের নলেজ পার্টনার ছিল ‘কার্ডোবিস’ ও ‘টেমস এ’ এবং মিডিয়া পার্টনার ছিল প্রথম আলো ডটকম।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপকে আমরা নীরব ঘাতক বলতে পারি। কারণ মাথা থেকে শুরু করে পায়ের রক্তনালি পর্যন্ত এটা খারাপ প্রভাব ফেলে। এতে চোখের জ্যোতি কমে যেতে পারে। কিডনি নষ্ট হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না যে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের এতসব ক্ষতি করছে। অথচ সঠিক যন্ত্র দিয়ে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়। নির্ণয় করে সচেতন হওয়া যায়।’

উচ্চরক্তচাপ বিষয়টি কী? এটি বুঝিয়ে বলেন ডা. মনওয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রক্তচাপ যদি ১২০ / ৮০-এর মধ্যে থাকে, তাহলে আমরা একে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলব। ১৩০ বেশি উঠে গেলেই সেটি উচ্চ রক্তচাপ। আবার নিচেরটাও যদি বেশি থাকে তখন সেটি উচ্চ রক্তচাপ।' ‘মিলিমিটার অব মার্কারি’ নামক একটি ইনডেক্স দিয়ে একে মাপা হয়।’

উচ্চ রক্তচাপের কারণ অনেক সময় জানা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে এটি শরীরের ভেতরের শারীরিক কোনো অবস্থার ফলাফল হতে পারে। স্থূলতা, ইনসুলিন রেজিসট্যান্স, বেশি লবণ গ্রহণ, অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, ধূমপান, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, জন্মগত, গর্ভাবস্থা, নিদ্রাহীনতা—এসব কারণে এই রোগ হয় বলে জানান ডা. মো. তৌফিকুর রহমান।

এটি একটি বংশগত রোগও। বাবা-মায়ের থাকলে ধরে নিতে হবে ৫০ শতাংশ আশঙ্কা আছে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার। যদি ৪০ বছর বয়সের দিকে হয়, তখন বুঝতে হবে এটি বংশগত—এমনটাই বলেন ডা. অশোক কুমার দত্ত।

উচ্চরক্তচাপ মাপার পরও অনেক সময় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়। কেন এত পরীক্ষা দেওয়া হয় তা ব্যাখ্যা করেন ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে আমাদের হৃদযন্ত্রের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। ডা. এ এন এম মোমেনুজ্জামান বলেন, ‘সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, ডায়াবেটিস আছে, কিডনিতে সমস্যা আছে, তাঁদেরই হার্টে সমস্যা হয়। উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত মানুষের মধ্যম ও বড় রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটাকে বলে শেয়ার স্ট্রেচ। রক্তচাপ বলতে রক্ত চলাচলের প্যারালাল ফোর্সকে বোঝায়। শেয়ার স্ট্রেচের জন্য রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপের জন্য হার্টের মাংসপেশিতে পরিবর্তন আসে। ভেতরে ফাইব্রোসিস হয়। উচ্চ রক্তচাপ একজন রোগীর হার্ট ফেইলিওরের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।’

হৃদরোগ ছাড়া উচ্চরক্তচাপ যে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গের ভয়াবহ ক্ষতি করে তা নিয়ে বলেন ডা. খালেকুজ্জামান।

যখন একজন নারী সন্তানসম্ভবা থাকেন, তখন এই রোগে আক্রান্ত হন বেশি। এই সময়ে কীভাবে একজন নারী সুস্থ থাকবেন তা নিয়ে দিক নির্দেশনা দেন ডা. মোহাম্মদউল্লাহ ফিরোজ।

এই রোগ নিরাময়ে আদর্শ এবং প্রথম সারির চিকিৎসা হলো জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন। স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি রুটিনমাফিক জীবন যাপন অনেকাংশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতারের মতো ব্যায়াম করা উচিত। মানসিক চাপ কমানো, অতিরিক্ত লবণ, অ্যালকোহল ও অতিরিক্ত শরীরের ওজন কমানোর পরামর্শ দেন ডা. আতাহার আলী।

কথায় কথায় নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ বাদ দেওয়া নয়, নিয়মিত ওষুধ ব্যবহারে সচেতনতার দিকটি তুলে ধরেন ডা. সজল ব্যানার্জি।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন ডা. মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের এখন অনেক নিরাপদ ওষুধ আছে। আগে এত ভালো ওষুধ ছিল না। এসব ওষুধ দিয়ে আমরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকার দিকেই আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত।’