বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা ও হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের আরও ছয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে।
নতুন করে মামলায় আসামি হওয়া অন্য সংসদ সদস্যরা হলেন ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের মো. সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার-৩-এর (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) সাইমুম সরওয়ার, নাটোর-২ (সদর) শফিকুল ইসলাম, নাটোর–৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) সিদ্দিকুর রহমান ও দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ)–এর খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রমেশ চন্দ্র সেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ঠাকুরগাঁও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রিপন ইসলামের করা হামলা মামলায়। মামলায় রমেশ সেনসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি বিশেষ দল সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে রমেশ চন্দ্র সেনকে আটক করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ঠাকুরগাঁও শহরে গত ১৬ জুলাই সমাবেশ করেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এতে ১২ শিক্ষার্থী আহত হন।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, রমেশ চন্দ্র সেনকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন।
সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা এবং আস-সাবুর (১৬) নামের দশম শ্রেণির এক স্কুলশিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে মো. সাইফুল ইসলামকে। এ মামলায় এই আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদসহ আওয়ামী লীগের ১১৯ জন নেতা-কর্মীর নাম করা হয়েছে। আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ জানান, নিহত সাবুরের প্রতিবেশী মো. সাহিদ হাসান (৩৭) এই মামলার বাদী। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মামলাটি গ্রহণ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক থেকে দেড় হাজার লোক বাইপাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এ সময় আসামিরা আন্দোলনকারীদের মারধর করেন ও গুলি ছোড়েন। তাঁদের পিটুনি ও ছোড়া গুলিতে আস-সাবুর নিহত হন।
নাটোর সদর থানায় গতকাল দুপুরে শফিকুল ইসলামসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে বিএনপির দুই নেতাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এর একটির বাদী জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান। অন্যটির বাদী জেলা যুবদলের সভাপতি আফতাব হোসেন। আসামিরা বাদীদের আলাদা স্থানে হত্যাচেষ্টা করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, শিগগিরই মামলা দুটির তদন্ত শুরু হবে।
কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর সড়কের নতুন বাহারছড়া এলাকায় ৪ আগস্ট বিকেলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। গুলিতে ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হন। ওই ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাতে আওয়ামী লীগের ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেলিম মিয়া। মামলায় সদ্য সাবেকে সংসদ সদস্য ও হুইপ সাইমুম সরওয়ারকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানায় খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয় শুক্রবার রাতে। মামলার বাদী হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের মিছিলে বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রসহ নিয়ে হামলা চালান। এ মামলায় খালিদসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ জনকে।
আরও যাঁরা আসামি
এর আগে গত কয়েক দিনে অন্তত ১০ জন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য হামলা ও হত্যার অভিযোগে করা মামলার আসামি হয়েছেন। তাঁরা হলেন চাঁদপুরের দীপু মনি, কুষ্টিয়ার মাহবুব উল হানিফ, ফেনীর নিজাম উদ্দীন হাজারী, বগুড়ার সাহাদারা মান্নান, মজিবর রহমান ও রাগেবুল আহসান, পাবনার গালিবুর রহমান, মাগুরার সাইফুজ্জামান শিখর ও বীরেন শিকদার এবং হবিগঞ্জের মো. আবু জাহির। এর বাইরে সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন। তাঁরাও দ্বাদশ সংসদে সংসদ সদস্য ছিলেন।