বাসে এক যাত্রীর ব্যাগ থেকে আসনের নিচে পড়ে গিয়েছিল একটি গয়নার বাক্স। সেটি থেকে বের হয়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে ছিল সোনার হাতের বালা, আংটি, গলার চেইনসহ বিভিন্ন গয়না। তবে তা খেয়াল না করেই বাস থেকে নেমে যান ওই যাত্রী। পরে গয়নাগুলো আবার বাক্সে ভরে যাত্রীকে ফেরত দিয়েছেন বাসটির ‘প্যাসেঞ্জার গাইড’ হিসেবে কর্মরত মো. সাব্বির আহমেদ।
গয়নাগুলো ফেলে যাওয়া যাত্রীর নাম মো. মেহেদি হাসান। তিনি জানান, লাল রঙের ওই বাক্সে প্রায় ছয় লাখ টাকার গয়না ছিল। সব গয়নাই ফেরত পেয়েছেন তিনি। সাব্বির আহমেদকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ভালো মানুষ এখনো আছে।’
২৮ ডিসেম্বর ভোররাতে গ্রিনলাইনের একটি বাসে ঘটে এ ঘটনা। ‘বাসেস অব বরিশাল টিএম’ নামের ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর সুমন এন মাহমুদ ঘটনাটি নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তাতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি মন্তব্যে সাব্বির আহমেদকে শুভকামনাও জানাচ্ছেন।
মুঠোফোনে কথা হয় সাব্বির আহমেদের সঙ্গে। গয়নাগুলো ফেরত না দিয়ে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখার বা দুই–একটা সরিয়ে রাখার সুযোগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক টাকাপয়সা নেই, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অনেক ভালো আছি। আমার মা ও বাবা ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন, অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করতে নেই। আমার জিনিস নয়, তাই ওই যাত্রীর কাছে কখন গয়নাগুলো তুলে দিতে পারব, তা নিয়েই চিন্তায় ছিলাম।’
সাব্বির আহমেদ জানান, সেদিন বাসটি ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় যাচ্ছিল। যাত্রী মেহেদি হাসান ও তাঁর স্ত্রী আফরিন সুলতানা পটুয়াখালীতে নেমে যান। বাস থেকে নামার পর ২০ মিনিটের মধ্যেই মেহেদি হাসান তাঁকে ফোন করে জানান, বাসে একটি গয়নার বাক্স ফেলে গেছেন তিনি। তখন সাব্বির বাসের সিটের চারপাশে খুঁজে দেখেন। পরে আসনের নিচে দেখেন, বাক্সের ঢাকনা খুলে গয়নাগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। তখন গয়নাগুলো যে অবস্থায় পড়ে ছিল, সেভাবেই মুঠোফোনে ভিডিও করে রাখেন। তারপর যাত্রীকে কুয়াকাটা বাসস্ট্যান্ডে এসে গয়নাগুলো নিয়ে যেতে বলেন।
সাব্বির আহমেদ বলেন, বাসভর্তি যাত্রী ছিলেন। তবে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। গয়নাগুলো যে কারও চোখে পড়লে নিয়ে যেতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘সোনার গয়না নিয়ে মানুষের লোভ থাকে। আর অনেক টাকার গয়না ছিল। আমিও চাইলে যাত্রীকে বলতে পারতাম, গয়না পাইনি বা গয়না থেকে দুই–একটা নিজের কাছে রেখে দিয়ে বলতে পারতাম, অন্যগুলো মিসিং (পাওয়া যাচ্ছে না)। কিন্তু আমি তা করিনি। গয়না ফেরত দেওয়ার সময় কোনো ছবিও তুলিনি, শুধু প্রমাণ রাখার জন্য মুঠোফোনে ভিডিও করেছি।’
সেদিন বাসে চালক, চালকের সহকারী এবং যাত্রীদের গাইড হিসেবে সাব্বির আহমেদ দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। এবার তিনি বিএ পরীক্ষা দিয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাসে গাইড হিসেবে সপ্তাহের দুই–এক দিন কাজ করেন। এ ছাড়া উজিরপুরে একটি ব্যাংকের এজেন্ট শাখায়ও কাজ করেন। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁর বাবা একটি মুদিদোকান চালান। মা গৃহিণী।
সাব্বির আহমেদ জানান, গাইড হিসেবে বাসে কাজটি করতে তিনি পছন্দ করেন। এ কাজের জন্যই তিনি ঘুরে বেড়াতে পারছেন। গয়নাগুলো যাত্রীকে ঠিকঠাকভাবে ফেরত দিতে পারায় তাঁর বাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও খুশি হয়েছেন।
বাসের ওই যাত্রী মেহেদি হাসান জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। সেদিন বাসটিতে করে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বাস থেকে নামার কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারেন যে গয়নার বাক্সটি তাঁর স্ত্রীর ব্যাগে নেই। তখন বাসের দায়িত্বে থাকা সাব্বির আহমেদকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
মেহেদি হাসান আরও বলেন, সাব্বির আহমদে চাইলে গয়নাগুলো ফেরত না দিয়ে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে পারতেন। কিন্তু এই তরুণ তা করেননি। এ ছাড়া গ্রিনলাইন বাসে এর আগেও মেহেদি হাসান মুঠোফোন ফেলে চলে গিয়েছিলেন। তবে পরে তা ফেরত পান।