রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল বাংলা হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আজ বুধবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো দুটি সচেতনতামূলক র্যালি। বর্জ্যের অব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি হতে পারে জলাবদ্ধতা, আর তা হতে পারে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতাই সূচিত করতে পারে পরিবর্তনের চাবিকাঠি। এই ধ্যানধারণার ওপর ভিত্তি করেই ‘সঠিক জায়গায় বর্জ্য ফেলি, পরিবেশ সুস্থ রাখি’ শিরোনামে আজ বুধবার সকালে প্রথমে ২৬০ জনের বেশি ছাত্রী এবং দুপুরে দেড় শতাধিক ছাত্র মিলে মিরপুর-২ এলাকার কিছু অংশ প্রদক্ষিণ করে।
‘আমাদের পরিবেশ আমরা পরিষ্কার রাখব’, ‘যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলা জলাবদ্ধতার কারণ’, ‘নিজেদের অভ্যাস বদলাই, তবেই দেশ বদলাবে’—শিক্ষার্থীদের এমন নানা আহ্বান ছিল হাতের প্ল্যাকার্ডের মুখ্য বিষয়। ওই র্যালি দুটির আয়োজন এবং সার্বিক সহায়তায় ছিল ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএইচ), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। গতকাল মঙ্গলবার তাদের আয়োজনে বাড্ডা এলাকায় বাড্ডা হাইস্কুলের অর্ধশত শিক্ষার্থীরা একই প্রতিপাদ্যে আরেকটি র্যালি করে।
ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ওয়েলকাম ট্রাস্টের অর্থায়নে, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন (যুক্তরাজ্য), কিংস কলেজ লন্ডন (যুক্তরাজ্য), হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাষ্ট্র) ও প্রথম আলোর সহায়তায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে ‘Pathways To Equitable Healthy Cities: Public Engagement Around Waste Induced Waterlogging’ শিরোনামে একটি গবেষণাকাজ শুরু করেছে। এ গবেষণার মাধ্যমে বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কমিউনিটি সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
জলাবদ্ধতায় ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে মিরপুর ও বাড্ডা এলাকায় তাদের এই কার্যক্রমে মোট ৯টি স্কুল অংশ নেয়। স্কুলগুলো হলো বাড্ডা গার্লস হাইস্কুল, বাড্ডা হাইস্কুল, সানশাইন মডেল স্কুল, ন্যাশনাল বাংলা হাইস্কুল, চেরি ব্লসম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, তাকওয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চেতনা মডেল একাডেমি, ইস্ট ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও নর্থ সাউথ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
এই স্কুলগুলোর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সৃষ্টিশীল উপায়ে স্কুলের অভ্যন্তরে ও কমিউনিটির মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে নানা কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে নিজেদের ক্লাসরুম ও মাঠ পরিষ্কার করা, পরিচ্ছন্নতা দিবস উদ্যাপন, পোস্টার, চিত্রাঙ্কন, ডকুমেন্টারি তৈরি, কমিউনিটির রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত দোকানগুলোয় ডাস্টবিন প্রদান করা, মানববন্ধনসহ নানা উপায়ে শিক্ষার্থীরা স্কুল ও কমিউনিটির মানুষদের সচেতন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগগুলোকে সম্ভবপর করে তোলার জন্য ওই গবেষণার প্রধান গবেষক প্রফেসর জাহিদুল কাকাইয়ূম সহযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। এই গবেষণার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় উপ–গবেষণা সমন্বয়কারী সাবরিনা মুস্তাবীন জায়গীরদার, গবেষণা সহযোগী খাদিজা তুল কোবরা নাহিন ও গবেষণা সহকারী তাসনিম আবদারি অনন্যা দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষকদের সহযোগিতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতাকে স্থায়ীভাবে একটি প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে স্কুলের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারী স্কুলগুলো পরিচ্ছন্নতা দিবস উদ্যাপন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিয়মিত আলোচনা, অ্যাসেম্বলি ক্লাসে বার্তা প্রদান করা ইত্যাদি কার্যাবলির মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও কমিউনিটির সদস্য, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সরকারি কর্মকর্তা, ইয়ুথ রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে কো–প্রোডাকশন ওয়ার্কশপের মাধ্যমে আলোচনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নানা সমস্যা ও সমাধানের উপায় লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত কার্যক্রমগুলো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এটি যেন তাদের বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে অবহিত করতে সাহায্য করতে পারে। সমাজের খুদে সদস্যদের আহ্বানেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতায় পরিবর্তন সূচিত হতে পারে, এমনটাই বিশ্বাস আয়োজক ও কলাকুশলীদের।