শীত শেষে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এবার শীতের মধ্যেও গড়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হয়েছে সারা দেশে। এখনো সেটি চলছে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে গ্রাম এলাকায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে।
দেশে এখন দিনে গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করে। এটি সামনে আরও বাড়তে থাকবে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বোরো ধানের সেচ মৌসুম। আগামী মে মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
ওই সময়ে উৎপাদন সক্ষমতা থাকবে ২৪ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। তবে জ্বলানিসংকটের কারণে সক্ষমতার কতটা উৎপাদন করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দেশে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল গত বছরের এপ্রিলে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। এর অর্থ হচ্ছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘাটতি আগের মতোই থাকতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য জ্বালানি (গ্যাস, তেল ও কয়লা) সরবরাহ নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আগামী পাঁচ মাসে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬০০ কোটি ডলারের বেশি লাগবে। ইতিমধ্যেই এ চাহিদা সরকারকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
যদিও ডলার–সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় গত জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এক মাস বন্ধ রাখতে হয়েছে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লার বিল বকেয়া রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে। পাঁচ মাসের বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
সব বিতরণ সংস্থাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর তা গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। এসব সংস্থার দায়িত্বশীল চার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে কোথাও কোনো লোডশেডিং ছিল না। কিন্তু এবার চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। তাই গড়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এর আগে গত বছরের জুলাই থেকে পরিকল্পিত লোডশেডিং শুরু করে সরকার, যা নভেম্বর পর্যন্ত চালু থাকে।
দেশের গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত বুধবার তাদের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৬ হাজার ৫২৫ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৮ মেগাওয়াট। ৬৯৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। স্থানীয় গ্রিড (বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল লাইন) থেকে চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ পাওয়ায় এই বিভাগের প্রতিটি জেলায় কমবেশি লোডশেডিং ছিল। মাত্রার দিক থেকে এরপর বেশি লোডশেডিং হয়েছে ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলে। তবে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু এলাকায় লোডশেডিং হলেও সময়ের দিক থেকে খুবই কম ছিল।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার প্রথম আলোকে বলেন, সামনে চ্যালেঞ্জ আছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা চলছে।