তরুণ প্রজন্ম উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বাঁচবে না: সুলতানা কামাল

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলেছেন, নদী কখনো উৎসমুখে ফেরত যায় না। কিন্তু উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে নদী বাঁচে না। একইভাবে তরুণ প্রজন্মও উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বাঁচবে না। পরম্পরা বজায় রাখতে হবে। ইতিহাস জানতে হবে। রিসেট বাটন টিপে দেওয়াই যায়, তারপর কী হবে, সে বোধটুকুও থাকতে হবে।

বুধবার ২০ নভেম্বর ছিল জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের ২৫তম প্রয়াণ দিবস। এ দিবস পালনের ঘরোয়া আলোচনায় কবি-কন্যা সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ১৫ নম্বর বাসা বা সাঁঝের মায়ায় এমএসএফ এবং সাঁঝের মায়া ট্রাস্ট যৌথভাবে কবি সুফিয়া কামালের স্মরণসভার আয়োজন করে।

কবি সুফিয়া কামালের স্মরণসভায় ঘুরেফিরে দেশের বর্তমানের ক্রান্তিকালের বিষয়টি তুলে ধরেন আলোচকেরা। তাঁরা বলেন, সুফিয়া কামাল এখানেই প্রাসঙ্গিক। দেশের এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেত। তাই কবির আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

স্মৃতিচারণায় সুলতানা কামাল বলেন, ‘ছোটখাটো গড়নের মানুষটি নিজের স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। তিনি বলতেন, নেতৃত্ব দিলে সব সময় থাকতে হবে, তা নয়। সেই চিন্তা এখন আর নেই বলেই আমরা বিরাট গর্তের মধ্যে পড়ে গেছি। সুফিয়া কামাল তরুণদের আদর্শিক নেতৃত্বের কথা বলে গেছেন। বর্তমানে তরুণের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নিয়ে কেউ ভাবছে না।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন কবিকন্যা সাঈদা কামাল। তিনি বলেন, ‘মায়ের সারাটা জীবন কেটেছে সংগ্রামের মধ্যে। তিনি সব খারাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সব সময়।’

স্মৃতিচারণায় কবি সুফিয়া কামাল যাঁকে বউমা ডাকতেন, সেই নারীনেত্রী মাখদুমা নার্গিস বললেন, ‘কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন আমার জীবনের আদর্শিক নেত্রী। তাঁকে সব সময় অনুকরণ করার চেষ্টা করি। খালাম্মা সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। তিনি যে মশাল জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে সে মশাল এগিয়ে নিতে হবে।’

স্মৃতিচারণায় অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রতীক। তিনি ছিলেন বিশাল বটবৃক্ষ, সেখানে সবাই আশ্রয় নিতেন। সংকটের সময় ধানমন্ডির এই বাড়িতে এসে সবাই ভরসা পেতেন, নির্দেশনা নিয়ে বের হতেন।

শামসুল হুদা বলেন, কবি সুফিয়া কামাল কখনো কথা বা বক্তব্যে অশালীন শব্দ ব্যবহার করতেন না। মার্জিত ভাষায় দৃঢ় অবস্থান নিতেন। বর্তমানের হিংসা-বিদ্বেষমূলক রাজনৈতিক অস্থিরতায় সুফিয়া কামালের এই বিষয়গুলো চর্চায় আনতে হবে।

নারীর মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত সুফিয়া আখতার বলেন, সাঁঝের মায়ার বাড়িটি, বিশেষ করে এ বারান্দাটি অনেক ঐতিহাসিক আন্দোলনের সাক্ষী। এ বাড়ির দুয়ার সবার জন্য সব সময় খোলা থাকত। কবির পরিবারের সদস্যরা বাড়িটিকে যাতে একইভাবে রাখেন, সে আহ্বান জানান তিনি।

সভায় এমএসএফের সদস্য মোহাম্মদ টিপু সুলতান স্বাগত বক্তব্য দেন। সাঁঝের মায়া ট্রাস্টের সদস্য জিনাত আরা হক সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। গান গেয়ে শোনান ফেরদৌসী রহমান ও মাহবুবা সুলতানা। খিয়ামুর রহমান কবি সুফিয়া কামালের লেখা থেকে পড়ে শোনান।

গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, নেটওয়ার্ক ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সানাইয়া ফাহিম আনসারী, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কমিউনিকেশন অফিসার নাজমুন নাহার প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।