পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজধানীতে আজ শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছে। গতকাল শুক্রবার দুই পক্ষের মধ্যে রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত রাখাইনের বুচিডং ও ফুমালি এলাকায় লড়াইয়ে বেশ কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
রাখাইনের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের বিষয়ে তাদের (ব্রিটিশ পার্লামেন্টের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, সেটি আজ হঠাৎ করে হয়নি।
বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তরক্ষীরা অনেক আগে থেকেই সেখানে সতর্ক রয়েছে। সেখানে কিছুদিন পরপরই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাখাইনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই আছে। আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যদি মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তারা তাদের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।’
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে আমাদের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো রোহিঙ্গা শিবির থেকে তাদের সদস্য নিয়োগের চেষ্টা করে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নানা সমস্যা। আমাদের দেশ জনবহুল, রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩৫ হাজার করে নতুন রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিজে যে রায় দিয়েছেন, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। দক্ষিণ আফ্রিকার আপিল আমরা এর আগে সমর্থন জানিয়েছি। ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি আরও সমর্থন দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের চার সদস্য বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছেন। আমাদের দেশে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে আইসিটি ও কৃষি খাতে বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা আছে, সেটি তাদের বলা হয়েছে।’