মারাত্মক রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত আসমাউলকে কোলে নিয়ে আছেন বাবা মতিউর রহমান
মারাত্মক রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত আসমাউলকে কোলে নিয়ে আছেন বাবা মতিউর রহমান

সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগাতে কৃষক মতিউরের সাহায্যের আবেদন

ছেলের জন্মের পর অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানার প্রত্যন্ত এক গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান। বড় হয়ে ছেলে সংসারের আর্থিক অনটন দূর করবে, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে—আরও কত–কী! কিন্তু মাত্র তিন বছর বয়সেই আসমাউলের শরীরে ধরা পড়ে মারাত্মক রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া।

সুদূর সিরাজগঞ্জ থেকে আসমাউল ঢাকায় এসেছে বাবার কোলে চড়ে। লম্বা পথের ঝক্কি আর হাসপাতালের বেডে শুয়ে রক্ত নেওয়ার বিরক্তিতে যেন আচ্ছন্ন হয়ে আসে শিশুটি। চোখে–মুখে রাজ্যের ক্লান্তি। প্রতি মাসে একবার করে রক্ত দেওয়া লাগে আসমাউলের শরীরে। তিন বছর ধরে সন্তানকে নিয়ে এই কষ্ট পোহাচ্ছেন মতিউর রহমান।

ছেলের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মতিউর বলেন, ‘আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে কত কষ্টে আছি। নিজে অসুস্থ হইলেও কাজে যাওয়া বাদ দিই না। জ্বর–ঠান্ডা নিয়াও ঝড়-বাদলার মধ্যে কাজ করতে যাই ছেলের মুখের দিকে চাইয়া।’
কথাগুলো বলতে গিয়ে গলাটা কেমন ধরে আসে অসহায় এই বাবার। কায়ক্লেশে জীবনযাপন করা কৃষক বাবার পক্ষে ছেলের এই চিকিৎসার খরচ বহন করা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং।

আরও কথা বলতে চাইলে কাঁদো কাঁদো গলায় মতিউর বলেন, ‘কষ্টের কথা জিজ্ঞেস কইরেন না, হাসপাতালে সবার সামনে কানতে পারমু না।’
সন্তানকে কোলে নিয়ে অসহায় বাবার এমন করুণ আকুতিতে কথা বাড়ানোর স্পর্ধা থাকে না।

মতিউরের কষ্ট লাঘবে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বলে জানান বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার শারমিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমানের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা তাঁর সন্তানকে জাকাত ফান্ডের আওতায় নিয়ে এসেছি। চলতি রমজানে জাকাত ক্যাম্পেইনে ফান্ডে অর্থের পরিমাণ বাড়লে আরও অনেক অসচ্ছল পরিবারের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে।’

বর্তমানে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রায় সাত হাজার রেজিস্টার্ড রোগী আছে, যাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র রোগী জাকাত ফান্ড থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারে সম্প্রতি স্থানান্তরিত হাসপাতালটির শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। যেখানে মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীরা সেবা নিচ্ছে। রমজান মাসেও রোগীর ভিড় ছিল লক্ষণীয়।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির হেড অব অপারেশনস এ বি এম জুনায়েদ বলেন, ‘প্রতিদিনই থ্যালাসেমিয়া রোগীর চাপ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জাকাত ফান্ড থেকে সুবিধা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও। আমাদের বড় অঙ্কের ফান্ড দরকার সবার চিকিৎসার জন্য।’

চলতি রমজানে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের জাকাত ক্যাম্পেইনে সবাইকে দান করার মাধ্যমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনে নিচের যেকোনো উপায়ে আপনার জাকাত দান করতে পারেন।

১. ব্যাংক হিসাব নাম: বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন (জাকাত ফান্ড), অ্যাকাউন্ট নং: ১০৮১১০০০৩৭৭০৩, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, শান্তিনগর শাখা, ঢাকা।

২. অনলাইনে ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের মাধ্যমে দান করতে ভিজিট করুন www.thals.org/zakat

৩. বিকাশ/নগদ/উপায় মার্চেন্ট নম্বর: ০১৭২৯২৮৪২৫৭ (‘পেমেন্ট’ অপশন ব্যবহার করে কাউন্টার নম্বরে ‘০’দিন)

ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন: www.thals.org/bn/zakat-for-life