রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে পুলিশের একজন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সোহাগ হুসাইন নামের এই পুলিশ সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। ‘আত্মহত্যা’ করা ছাত্রীর নাম লামিয়া আলম (২২)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, চার বছর আগে সোহাগ গাজীপুর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় লামিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। পরে বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় স্ত্রী পরিচয়ে লামিয়াকে নিয়ে একটি বাসায় থাকতেন। তবে লামিয়া বিয়ের কথা বললে টালবাহানা শুরু করেন সোহাগ। ৯ ফেব্রুয়ারি লামিয়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সোহাগ চিকিৎসা করিয়ে তাঁকে তাঁর খালার বাসা মুন্সিগঞ্জে রেখে আসেন।
পরে ১১ ফেব্রুয়ারি সোহাগ বিয়ে করার কথা বলে লামিয়াকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে আসেন। বাসায় আসার পর লামিয়াকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করে আত্মহত্যা করতে বলেন সোহাগ। এরপর গত বুধবার লামিয়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার যাত্রাবাড়ী থানায় সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা করেন লামিয়ার মা মনজু বেগম। তিনি সোহাগকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পুলিশ বলেছে, সোহাগ পালিয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল সোহাগ সর্বশেষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার রঘুনাথপুরে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সোহাগ আগেও বিয়ে করেছেন। আগের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। সেই ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। গত বুধবার লামিয়ার মায়ের উপস্থিতিতে সোহাগ বিয়ের কথা অস্বীকার করলে এ নিয়ে লামিয়া ও সোহাগের ঝগড়া বাধে। পরে সোহাগ তাঁর কর্মস্থলে যান।
ওই দিন সকাল ১০টার দিকে লামিয়ার মা রান্নাঘরে ছিলেন। এ সময় লামিয়া ছিলেন শয়নকক্ষে। দীর্ঘক্ষণ লামিয়ার সাড়া না পেয়ে মা কক্ষের দরজা ধাক্কাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে দরজার ছিটকিনি খুলে যায়। এ সময় তিনি দেখেন, লামিয়া ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় লামিয়াকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে মনজু বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সোহাগের প্ররোচনায় তাঁর মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। সোহাগের স্বজনেরা এখন মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন। তাঁরা বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দিচ্ছেন।
আজ শনিবার যোগাযোগ করা হলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহাগকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’