কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল
কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল

হলফনামা বিশ্লেষণ

সব ‘বিলিয়ে দেওয়া’ সাইমুমের আয়, নগদ টাকা সবই বেড়েছে

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু ও ঈদগাঁও) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল প্রায় সময় বলে থাকেন, ক্ষমতার ১০ বছরে তিনি কোনো অবৈধ টাকা বা সম্পদ অর্জন করেননি। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমেও বৈধভাবে অর্জিত টাকা নিজের জন্য বা স্ত্রী-সন্তানের জন্য জমা রাখেননি। সবকিছু তিনি নির্বাচনী এলাকার গরিব অসহায় মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন।

সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ভোটকেন্দ্রভিত্তিক প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় এসব কথা তুলে ধরেছিলেন সাইমুম সরওয়ার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর ওই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।

তবে সব সম্পদ গরিবের জন্য ‘বিলিয়ে দেওয়ার’ পরও গত ১০ বছরে সাইমুম সরওয়ারের বার্ষিক আয়, নগদ টাকা, ব্যাংকের জমা করা অর্থ, বিনিয়োগসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীও জমি, গাড়িসহ বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

আয় বেড়েছে নিজের ও স্ত্রীর
৫ বছর আগে (একাদশ সংসদ নির্বাচনে) ব্যবসা থেকে সাইমুমের আয় ছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চাকরি (পারিতোষিক) থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অন্যান্য ও মৎস্য খাত (সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই) থেকে ২৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আয় ছিল ৪৫ লাখ টাকা। এবার সাইমুমের ব্যবসা থেকে আয় দেখানো হয় ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। চাকরি থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মৎস্য খাতে আয় দেখানো হয় ২৬ লাখ টাকা। মোট আয় ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

১০ বছর আগে সাইমুমের কৃষি খাতে (জমির পরিমাণ উল্লেখ নেই) আয় ছিল ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এখন কৃষি খাতে তাঁর আয় দেখানো হয় ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট–দোকানভাড়া পেতেন ১ লাখ ৬০ হাজার ১৪৩ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় হতো ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকানভাড়া বেড়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ২৮৮ টাকা হয়েছে। ব্যবসায় আয় আড়াই গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায়।

মৎস্য খাতে ৫ বছর আগে সাইমুমের আয় ছিল ২৭ লাখ টাকা। এখন ১ লাখ টাকা কমিয়ে ২৬ লাখ টাকা দেখানো হয়। তবে মৎস্য খাতে স্ত্রীর আয় দেখানো হয় ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৫০ টাকা। অস্থায়ী সম্পদ হিসেবে সাইমুমের নগদ টাকা, ব্যাংকে জমানো টাকা, শেয়ার ও বিনিয়োগ বেড়েছে অনেক।

দশম সংসদ নির্বাচনের সময় সাইমুমের নগদ টাকা ছিল ছয় লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে দেখানো হয় ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯০ টাকা। এখন সাইমুমের নগদ টাকা ১০ লাখ। স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ১০১ টাকা। ১০ বছর আগে সাইমুমের ব্যাংকে জমা ছিল ৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৮ টাকা। এখন সাইমুমের ব্যাংকে জমানো টাকার পরিমাণ ৪৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা দেখানো হয় ১ কোটি ৭২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৩ টাকা।

বেড়েছে সম্পদ ও বিনিয়োগ
স্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে স্বামী-স্ত্রীর। ১০ বছর আগে সাইমুমের কৃষিজমি (পরিমাণ উল্লেখ নেই) ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার। অকৃষিজমি ২০ লাখ ৭৬ হাজার ১৬০ টাকার। স্ত্রীর নামে অকৃষিজমি ছিল ৩০ লাখ ৭৫০ টাকার।

এবার সাইমুমের কৃষিজমির মূল্য একই রকম ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হয়। তবে অকৃষিজমির পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো হয় ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৬০ টাকা। স্ত্রীর নামে অকৃষিজমির পরিমাণ ঠিক রেখে দেখানো হয় ৩০ লাখ ৭৫০ টাকা।

১০ বছর আগে সাইমুমের ৪০ লাখ টাকা দামের দালান, ৪২ লাখ ৫০০ টাকা দামের অ্যাপার্টমেন্ট এবং চা–বাগান, রবারবাগান, মৎস্য খামার থেকে আয় দেখানো হয় ৬ লাখ টাকা। এখন দালানের মূল্য ঠিক রেখে বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্টের দাম ২ গুণ বাড়িয়ে ৮৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ টাকা দেখানো হয়েছে। ১০ বছর আগে সাইমুমের বাস, ট্রাক, মোটরগাড়িতে (সংখ্যা ও গাড়ির নাম উল্লেখ নেই) ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ দেখানো হয়। এখন বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেলে বিনিয়োগ দেখানো হয় দেড় কোটি টাকার মতো। স্ত্রীর নামে দেখানো হয় (সুস্পষ্ট করে গাড়ির নাম ও সংখ্যা উল্লেখ নেই) ৫৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮০ টাকা। স্ত্রীর অন্যান্য খাতে দেখানো হয় ৫০ লাখ টাকা।

১০ বছর আগে সাইমুমের বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার ছিল ৪ লাখ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এখন বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়। স্ত্রীর নামে দেখানো হয় ৫৪ লাখ ২ হাজার ১৪৫ টাকা। স্ত্রীর নামে পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দেখানো হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।