রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথিরা। গতকাল সোমবার
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথিরা। গতকাল সোমবার

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

অনিচ্ছার কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি

পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তির পরও শান্তি রয়ে গেছে অধরা। বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এলেও অনীহার কারণে চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। এখন কার্যকর শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে তিন পার্বত্য জেলার লোকজনের পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে সামগ্রিকভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জড়িত।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত দেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসিমুল গণির রিজিওনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সিএইচটি পিস অ্যাকর্ড ১৯৯৭: অ্যান আনফিনিশড পিস বিল্ডিং মডেল অব বাংলাদেশ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়া এবং সাময়িকী ডিপ্লোমেটস ওয়ার্ল্ড।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার যে কাজটি আমাদের ছিল, তা শুরু করতে হবে। কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে এখানে অশান্তি থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করবে। সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’

শান্তি প্রতিষ্ঠায় সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অভাবগ্রস্ত মানুষেরা সুযোগের সন্ধানে সেখানে যান। আরেক শ্রেণির মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ভিন্ন সুযোগের সন্ধানে সেখানে যান। সেখানকার জমি ব্যবহার করে কেউ সৎ বা কেউ অসৎ উপায়ে ধনী হন। আমাদের পাহাড়ের মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে। বাঙালি ছাড়াও যাঁরা আছেন, তাঁদের বৈষম্যহীনভাবে অধিকার দিতে হবে এবং সম্মান করতে হবে। এখানেই হয়তো সমাধান নিহিত, আর বিষয়টি সহজ নয়।’

কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে এখানে অশান্তি থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করবে। সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে
মো. তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক) লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, বইটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন অন্তর্বর্তী সরকার তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত লোকজনের মধ্যে নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও সামাজিক সংহতি রক্ষায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাঁর মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার মধ্যে নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় বিষয়, রাজনৈতিক বিষয়, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ভূমির মালিকানা এবং সম্পূরক অর্থনীতি ও সামরিক উপাদান রয়েছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি সইয়ের ২৭ বছর পরও শান্তি থেকে গেছে অধরা। কারণ, বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এলেও চুক্তির বেশির ভাগ শর্তই পূরণ করেনি। প্রতি মাসে খুনোখুনিসহ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আগে আমাদের নীতির ওপর মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের কৌশলগত সমস্যার চিন্তায় শুধু সামরিক দিক থেকে দেখলে হবে না। সামরিক বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সামরিক বিষয় সবকিছু বুঝতে পারে না। এ সমস্যা সামরিক নয়, এমনকি রাজনৈতিকও নয়। এ সমস্যা নাগরিক সমাজ থেকে শুরু হয়।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমরা এটা বাস্তবায়িত করতে চাইনি। বাস্তবায়ন করতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কী চায়, সেটা আমাদের মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।’