‘নতুন সংবিধানের আগে নির্বাচনী আলাপ করা যাবে না’

‘খুলনা রাইজিং’ নামে খুলনায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। শুক্রবার বিকেলে নগরের সাতরাস্তা মোড়ের বিএমএ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অলিক মৃ বলেন, ‘নতুন সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী আলাপ করলে হবে না। দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে যেসব দাবি উঠেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত একটা দাবি পূরণ হওয়া বাকি থাকবে, আমরা সেই দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে থাকব। মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। যদি ফ্যাসিস্টরা আবার ক্ষমতায় আসে, এ দেশে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে আপনি-আমি, আমরা কেউ বাঁচব না। সেটা আমরা হতে দেব না।’

আজ শুক্রবার খুলনায় জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অলিক মৃ এ কথা বলেন। বিকেলে নগরের সাতরাস্তা মোড়ের বিএমএ মিলনায়তনে ‘খুলনা রাইজিং’ নামে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির খুলনা বিভাগ।

অলিক মৃ বলেন, ‘আমাদের সংবিধানই হলো ফ্যাসিস্ট তৈরির কারখানা। যে সংবিধান আমাদের ফ্যাসিস্ট বানায়, যে সংবিধান ফ্যাসিস্ট–কাঠামো তৈরি করে, সেই সংবিধান রাখা যাবে না। নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। যাঁরা জীবন দিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ না করতে পারলে, নতুন সংবিধান রচনা না করতে পারলে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে না পারলে রক্তের ঋণ শোধ হবে না। যতক্ষণ রাষ্ট্র পুনর্গঠন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ছাত্র, শ্রমিক, জনতা যারা রয়েছি, তারা নির্বাচন হতে দেব না। আগে সংবিধান রচনা করতে হবে, রাষ্ট্রের সব শ্রেণির মানুষের অধিকারের কথা সংবিধানে নিয়ে আসতে হবে। সবার অধিকারের ভিত্তিতে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’

আহম্মদ হামিম রাহাতের সঞ্চালনায় অলিক মৃ আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়া শব্দটা আমরা ফেলে দিতে চাই। আমরা ক্ষমতায় পাঠাই না; দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিই। যে সরকারি কর্মকর্তা ঘুষ চাইবেন, দুর্নীতি করবেন, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাবেন। কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আজ থেকে আপনারা আর স্যার বলবেন না। আমাদের করের টাকায় তাঁদের বেতন হয়। তাঁরা আমাদের স্যার বলবেন। তাঁদের আমরা স্যার বলে বলে এমন ক্ষমতায়িত করেছি, তাঁরা আমাদের মানুষ বলে আর মূল্যায়ন করেন না।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মো. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘আমরা এক ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে পেরেছি। তবে এখনো কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারিনি। আমাদের আসল যুদ্ধ এখনো শুরু হয়নি। এ রকম স্বৈরাচার যাতে আর জন্ম নিতে না পারে, মানে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করতে না পারলে আমরা যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলছি, তার সুফল পাব না। রাজনীতিকে নয়, আমরা নোংরা রাজনীতিকে ঘৃণা করি। রাজনীতি না করলেও আমাদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি জনগণের কথা না শোনে বা যদি ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে চায়, তাহলে তাঁরা তা প্রতিহত করবেন।

নাগরিক কমিটির আরেক সদস্য তানজিল মাহমুদ বলেন, ‘যে সংবিধান আমাদের আছে, সেটা ফ্যাসিবাদ তৈরি এবং পুনর্বাসনের সংবিধান। ফ্যাসিবাদকে বারবার গড়ে তোলার সংবিধান। গত ১৭ বছর সংবিধানের দোহাই দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর নানারূপে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে চেয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দেবে না। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বক্তারা বৈষম্যবিরোধী আগামীর বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে নাগরিক কমিটিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন জেলার সংগঠক, জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীসহ শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আলোচনায় অংশ নেন।