চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরের হাড় ভেঙে ফেলবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। মুঠোফোনে আবদুল গফুরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগও উঠেছে। মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে গালিগালাজ করা হয় বলে আবদুল গফুর প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন। মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আবদুল গফুরের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডটি আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণের নামে সাবেক সংসদ সদস্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন, গফুরের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে মোস্তাফিজুর এভাবে গালিগালাজ করেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ২৯ জুন উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্যে আবদুল গফুর কার্যালয় নির্মাণে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে অভিযোগ করেন।
পরদিন কয়েকটি গণমাধ্যমে গফুরের অভিযোগসংবলিত বক্তব্যটি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর মোস্তাফিজুর মুঠোফোনে গফুরকে হাড় গুঁড়ো করে দেওয়ার হুমকি দেন। প্রথমে মোস্তাফিজুর নিজে ফোন দিলে গফুর ধরতে পারেননি। পরে তিনি আবার মোস্তাফিজুরকে ফোন করেন। তখন এই কথোপকথন হয়।
এক মিনিটের বেশি এই কথোপকথনের শুরুতে গফুর মোস্তাফিজুরকে সালাম দেন। গফুর বলেন, ‘আমার ওই ফোনে চার্জ নেই।’
এরপর মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘কাল (২৯ জুন) এগুলো কী বলেছিস? আমি কার থেকে চাঁদা নিয়েছি পার্টি অফিস বানানোর জন্য?’
জবাবে গফুর বলেন, ‘ওগুলো তো চেয়ারম্যানরা বলছেন।’
উত্তেজিত হয়ে গালি দিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘চেয়ারম্যানরা বলছে, আমার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করবি না, প্রমাণ দে না।’
গফুর আবারও বলেন, ‘চেয়ারম্যানরা সবাই বলছেন তো। তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি এত দিন আপনাকে বলিনি।’
তখন গালিগালাজ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোন... (ছাপার অযোগ্য) কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তার (ছাপার অযোগ্য) প্রমাণ দেখাতে বল। নইলে তোকে এসে হাড্ডি (হাড়) ভেঙে ফেলব আমি।’
গফুর আবার বলেন, ‘চেয়ারম্যানরা সবাই এখন বলছেন তো।’
তখন মোস্তাফিজুর রহমান উত্তেজিত হয়ে আবার গালিগালাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘যে বলেছে তাকে আমার সামনে নিয়ে আয়। চাঁদা নিয়েছি এটা প্রমাণ দিতে হবে।’
একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘তুই এখনো আমাকে চিনস নাই। আমি এলে তোর হাড় গুঁড়ো করে ফেলব।’
এভাবে কথোপকথনে আবার গালি দিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘তোকে বাঁশখালী কলেজে ঢুকিয়েছি আমি। হয় কি না, তুই কোরআন ধরে শপথ করে বল না। আমি আগে চট্টগ্রাম আসি।’ উল্লেখ্য, সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক।
২৯ জুন অনুষ্ঠিত দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যে সভায় গফুর বক্তব্য দেন, সেখানে বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্যের গালিগালাজ প্রসঙ্গে আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কেন চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছি, সে জন্য আমার মা–বাবা ধরে গালিগালাজ করেছেন আমার সভাপতি। এমন অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন যে তা মুখে আনা যায় না।’
এ বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পৌর সদরে নির্মাণ করা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই কার্যালয় নির্মাণ শুরু হয়। এক বছর আগে কার্যালয়টির উদ্বোধন করা হয়। কার্যালয় করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। অবশ্য ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে। এর আগে বাঁশখালী থানা কার্যালয়ে হাজির হয়ে মোস্তাফিজুর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমদের দিকে তেড়ে যান। এ কারণে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে নির্বাচনে মুজিবুর রহমান ৫৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন।
দলের নেতাকে নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের কটূক্তি এবার প্রথম নয়। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য থাকার সময় দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও কটূক্তি করেন। তখনো গাড়িতে বসে করা কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ছাড়া প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করেও সমালোচিত হন তিনি।