চট্টগ্রাম নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণী উৎসবে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বই উপহার দেন। আজ শুক্রবার দুপুরে
চট্টগ্রাম নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণী উৎসবে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বই উপহার দেন। আজ শুক্রবার দুপুরে

চট্টগ্রামে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুল কর্মসূচি

শুধু বই পড়া নয়, ঘরের বাইরেও বের হতে হবে: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ‘বই পড়লে আলোকিত হওয়া যায়। চিন্তাধারা স্বচ্ছ হয়। শুধু বই পড়া নয়, ঘরের বাইরেও বের হতে হবে। যেতে হবে নীল আকাশের সামনে। বিশাল পর্বতের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। ঘুরে বেড়াতে হবে অরণ্যের ভেতরে।’

আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণী উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন। বইপড়া কর্মসূচিতে উৎকর্ষের পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। আয়োজনে উদ্বোধনী পর্বে ছিল আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ। এরপর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘মাছি ঘোরে ময়লার ওপর। মৌমাছি ফুলের ওপর উড়ে বেড়ায়। তোমরা মৌমাছি হও। মাছি নয়।’

পরামর্শের পাশাপাশি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ শিক্ষার্থীদের গল্প শোনান। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘মানুষের জ্ঞান দরকার। জ্ঞান অর্জন করা গেলে দূরকে দেখা যায়। গভীরতাকে বোঝা যায়। শান্তভাবে সমস্ত কাজ করা যায়। তাই জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই।’

মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী বই পড়া কর্মসূচিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। শিক্ষার্থী থাকাকালে তিনিও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানান।

সমাজসেবক ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি পারভীন মাহমুদ বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা বাল্যশিক্ষা পড়তাম। সেই বাল্যশিক্ষায় ছিল, সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। এখনকার দিনে পড়াশোনার অনেক চাপ। বাচ্চারা আগের মতো সুযোগ পায় না। তবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র চার দশকের বেশি সময় ধরে আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তোমরা সবাই আলোর পথযাত্রী।’

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল আউয়াল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা সব সময় করে যেতে হবে। মিথ্যা বলা যাবে না। এই শপথ ভঙ্গ করলে জীবন ব্যর্থ।’

গ্রামীণফোন চট্টগ্রামের সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এখন বই পড়ার চর্চা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কিন্তু আপনারা ধরে রেখেছেন। তাই আপনাদের অভিনন্দন। সেই দুই দশক ধরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করছে গ্রামীণফোন। কারণ, আমরা চাই বাংলাদেশে একঝাঁক আলোকিত মানুষ তৈরি হোক। তরুণ প্রজন্ম হবে বুদ্ধিমান, সচেতন ও দেশপ্রেমী। এ জন্যই বই পড়া ও জ্ঞান অর্জন করার বিকল্প নেই।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রেডিসন ব্লু চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।

চট্টগ্রাম নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণী উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে

সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর মিলনমেলা

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগরের ৩১৫টি স্কুলের প্রায় ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। এসব স্কুলের ১৮ হাজার ৮২৬ জন ছাত্রছাত্রী মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। তাদের পুরস্কার প্রদানের জন্য গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় দেশের পাঁচটি মহানগরে বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণ উৎসবের আয়োজন করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। সম্প্রতি ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল মহানগরে হয়েছে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।

আজ চট্টগ্রাম নগরের ৯৩টি স্কুলের ৫ হাজার ৫০৩ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। দুই পর্বে এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। সকালের পর্বে ৪৫টি স্কুলের ২ হাজার ৮০৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। বাকিদের দেওয়া হচ্ছে দুপুরের পর্বে।