নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মণের (১৬) হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত এক সাংস্কৃতিক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
মুক্তি হত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশটির আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সেখানে বক্তারা বলেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে একের পর এক খুনি তৈরি হচ্ছে। ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় এ ধরনের ‘অমানুষ’ তৈরি হচ্ছে। খুনি তৈরি হওয়ার এই প্রক্রিয়া বন্ধের দিকে রাষ্ট্রকে নজর দিতে হবে।
বারহাট্টায় গত মঙ্গলবার স্কুল থেকে ফেরার পথে মুক্তি রানী বর্মণকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কাওছার মিয়া (১৮) নামের এক তরুণের বিরুদ্ধে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তি উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে। সে উদীচী বারহাট্টা শাখার কর্মী এবং নারী প্রগতি সংঘের ইয়ুথ গ্রুপ ও কংস থিয়েটারের সদস্য ছিল। কাওছার একই গ্রামের বাসিন্দা। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সমাবেশে অংশ নিয়ে মুক্তির হত্যাকারীর যথাযথ বিচার ও ফাঁসি দাবি করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের চেয়ারপারসন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম। তিনি বলেন, ‘আগে পাড়ায় পাড়ায় নানা সামাজিক সংগঠন ছিল। কিন্তু আজ পাড়ায় পাড়ায় আছে দৈহিক ও অর্থের ক্ষমতায় বলীয়ান শিক্ষা-যোগ্যতাহীন মাস্তানেরা। এমন সমাজব্যবস্থায় এ রকম (নারীর প্রতি সহিংসতা) ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি যে আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না, হবে বলেও মনে হয় না।’
বছরে তিন হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হন—এমন তথ্য দিয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সহিংসতাকারী ও সহিংসতার শিকার—দুজনই তরুণ। উভয়েরই বয়স ২০ বছরের মধ্যে। আজকে নারীর প্রতি নির্যাতনের মূল কারণ, সমাজে নারীর অবস্থান, নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসমতা ও সম্পদের অসমতা। এই অসমতাকে ধারণ করে আমাদের সামাজিক কাঠামো, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক অবস্থা, মননসহ সবকিছু।’
বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে সারা দেশে এ ধরনের অপরাধ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে অভিযোগ করে উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান বলেন, ‘মুক্তির হত্যাকারী কাওছারের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হোক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের মাধ্যমে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।’
মুক্তির হত্যাকারী গ্রেপ্তার হলেও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে একজন শিশুর সুশিক্ষা বা মানবিক শিক্ষার সুযোগ নেই। আমাদের বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্রকাঠামো সবকিছু আজ ভেঙে পড়েছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমামের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শফিকুর রহমান, নারী প্রগতি সংঘের কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, সিপিবির নারী সেলের সদস্য লুনা নূর, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আকরামুল হক বক্তব্য দেন।