বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া।
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া।

দক্ষ কর্মীদের কাজের সুযোগ ইউরোপের চার দেশে

ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া পৃথক খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে জাহাজ নির্মাণ, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, নির্মাণ খাত, পর্যটন ও কৃষি খাতে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চারটি দেশ তাদের ছয়টি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইইউর চার দেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে আগামী জুনের মধ্যে পথনকশা (রোডম্যাপ) চূড়ান্ত করা হচ্ছে। দক্ষ কর্মী পাঠানোর সামর্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ইউরোর আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
ইইউর ওই চার দেশ হলো ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর বৈধ পথে অভিবাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। গত ৪ ও ৫ মার্চ ব্রাসেলসে এ নিয়ে আলোচনা করেছে দুই পক্ষ। আগামী জুনের মধ্যে এ বিষয়ে পথনকশা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

বৈধ পথে ইউরোপে অভিবাসনে সহায়তার জন্য ইইউ ২০২১ সালে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ নামে বিশেষায়িত কর্মসূচি শুরু করেছে। এর আওতায় থাকা সাত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। মূলত ইউরোপের বাইরের অংশীদার দেশগুলোর নাগরিকদের দক্ষতা অর্জন ও কাজের সুযোগ দিতে এই কর্মসূচি নিয়েছে ইইউ।

বাংলাদেশ মনে করছে, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের আওতায় চার দেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু হলে তার ধারাবাহিকতায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বেও কাজের পরিধি বাড়বে।

এটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ইউরোপের আরও অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখাবে।
মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতালি, জার্মানি, গ্রিস ও রোমানিয়া পৃথক খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে জাহাজ নির্মাণ, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, নির্মাণ খাত, পর্যটন ও কৃষি—প্রাথমিকভাবে এই ছয় খাতে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় লোক পাঠানো হবে, তা নিয়ে ইইউর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

দক্ষ কর্মী পাঠানোর পথনকশা চূড়ান্ত করার বিষয়ে গত বুধবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে তাঁর দপ্তরে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী জুনের মধ্যে পথনকশা চূড়ান্ত করে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার আশা করছি। ইইউর ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। এটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ইউরোপের আরও অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখাবে।’  

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন

ইতালি চায় তৈরি পোশাক খাতের কর্মী, জার্মানি তথ্যপ্রযুক্তির

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের চাহিদা আলাদা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইতালি তৈরি পোশাক ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বাংলাদেশের কর্মী নিতে চায়। জার্মানি চাইছে পর্যটন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মী। রোমানিয়ার চাহিদা নির্মাণশিল্পের দক্ষ কর্মী। আর গ্রিস চায় বাংলাদেশের কৃষি খাতের দক্ষ কর্মী।

পথনকশায় যা থাকছে

চার দেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর যে পথনকশা তৈরি হচ্ছে, তাতে ওই দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ছয় খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েছে। আগ্রহী কর্মীদের ডেটাবেজ তৈরি, প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণের বিষয় নির্ধারণ, প্রশিক্ষণের পরে সনদ প্রদান, ইতালিতে যেতে হলে ভাষার পাশাপাশি সেখানকার জীবনাচার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, গ্রিসের ভাষার ওপর প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো রয়েছে। ইউরোপ থেকে কাজ শেষে কর্মীরা দেশে ফিরে এলে তাঁদের সমাজে আত্তীকরণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকবে পথনকশায়।

কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবে

কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে, তা নিয়ে ইইউর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কারণ, অতীতে বৈধ পথে কর্মী না পাঠানো, মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইউরোপ যাওয়া আর কর্মীরা প্রতারিত হওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবে, এটি দ্রুত সুরাহা করতে চায় দুই পক্ষ।

গ্রিস বাংলাদেশের কৃষি খাতের দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ থেকে দুটি প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিশেষায়িত দক্ষ কর্মী (এসএসডব্লিউ-স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার) মডেল, যার মাধ্যমে জাপানে লোক পাঠানো হয়। আরেকটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অনুসৃত কর্মসংস্থান অনুমোদন প্রকল্প (ইপিএস-এমপ্লয়মেন্ট পারমিট স্কিম)। ইউরোপের ক্ষেত্রে এ দুটি মডেলের ধারাবাহিকতায় একটি মডেল তৈরি করা যেতে পারে। কিংবা অতীতে হংকংয়ে যেভাবে লোক পাঠানো হয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে ইউরোপে যে প্রক্রিয়াতেই কর্মী পাঠানো হোক না কেন, নিয়োগের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের হাতেই থাকবে।

দক্ষ শ্রমিকদের নেওয়ার প্রস্তাব

বাংলাদেশে একাধিক বৃহৎ প্রকল্পে (মেগা প্রজেক্ট) অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছেন এবং করছেন। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল বা এ ধরনের প্রকল্পে কাজ করার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় এবং সেটি তাঁরা অর্জন করেছেন। কিন্তু তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সনদ নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিশেষভাবে দক্ষ ওই শ্রমিকদের বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগ আছে। কিন্তু সনদ না থাকায় তাঁদের চাকরির বাজার খুবই সীমিত। ইউরোপের সঙ্গে আলোচনায় বৃহৎ প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ওই শ্রমিকদের কোনো সনদ না থাকায় সেটি যেন তাঁদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ইইউর কাছে সম্প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।