নিজের জীবনকে জিন্দা-মরার মতো ভাবেন মনির

মনির হোসেন
মনির হোসেন

‘একের পর এক বিকট শব্দ। এরপর আর কিছুই মনে নেই। তিন দিন পর জানতে পারি, আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পা ভেঙে গেছে। শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার। এখনো ব্যথায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সব সময় ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে হয়। নিয়মিতই ওষুধ খেতে হয়।’

কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় আহত সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিজি মো. মনির হোসেন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার রায়েরবাগ এলাকার জনতাবাগ বাজারসংলগ্ন ভাড়া বাসায় বসে সেদিনের বিভীষিকাময় স্মৃতি আর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

শরীরভর্তি শত শত স্প্লিন্টারের যন্ত্রণার কথা কী বলব। ব্যথা শুরু হলে মাথা ঠিক থাকে না। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে জিনিসপত্র ভাঙচুর করি। গাড়ির হর্নের শব্দে কান থেকে রক্ত বের হয়।
রাশেদা আক্তার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভুক্তভোগী

মনিরসহ তাঁরা তিন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মনির বলেন, ‘সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ মনে হয়েছিল। আমি তো মনে করেছি, আমি শেষ। আমরা কি তাহলে আবার একাত্তরের পর্যায়ে এসে পড়লাম?’

সাবেক এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বলেন, ‘আপা (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন...তারপরেই একের পর বিকট শব্দ। আমি তিন দিন পর জানতে পারি ঢাকা মেডিকেলে আছি। সেখানে কান্না আর কান্না। প্রায় ২১ দিন ওই হাসপাতালে ছিলাম।’

মিজি মনির জানালেন, তাঁর দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। দুই মেয়ে বিদেশে থাকেন। একজন সিঙ্গাপুরে, আরেকজন দুবাই। ছেলেদের মধ্যে একজন গাজীপুরে ব্যবসা করেন, অন্যজন স্নাতকে (সম্মান) পড়ছেন। ছোট ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর জীবন কেমন যাচ্ছে, এমন প্রশ্নে মিজি মনির বলেন, ‘আমার জীবনটা তো জিন্দা–মরার মতো। শুয়ে থাকি, বাইরে খুব কম যাই। তবে সব সময় আপা (শেখ হাসিনা) খোঁজখবর নেন। সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওসার মোল্লার মাধ্যমে আপা টাকা পাঠাতেন। এখনো পাই।’

আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন আর কোনো দলীয় পদে নেই। তবে ‘২১ আগস্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। এখন এই সংগঠনের সহসভাপতি তিনি।