চট্টগ্রামের ৯২ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতুটিতে আরেক দফা বড় আকারে সংস্কার করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। এবারের সংস্কারকাজে লাগবে অন্তত ৫৫ কোটি টাকা। এ কাজে চলতি মাসে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেবে রেলওয়ে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এই বছরেই এই রেললাইন চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই রুটে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কালুরঘাট রেলসেতু।
বর্তমানে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ট্রেনের ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। এ সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। কিন্তু কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ভর হবে ১২ থেকে ১৫ টন। ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।
বর্তমানে জরাজীর্ণ এই সেতু দিয়ে ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ মাত্র ১০ কিলোমিটার। তাই কক্সবাজারগামী দ্রুত ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতু সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করা হবে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কারে বুয়েটের পরামর্শক দলের কিছুদিনের মধ্যে বিস্তারিত নকশা ও প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। সংস্কারকাজের জন্য এই মাসেই ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। ছয় মাসের মধ্যে এই সংস্কারকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বিকল্পও নেই। কেননা, এর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই সংস্কারকাজ শেষ করতে হবে।
৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু এরপরও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ।
রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, বর্তমানে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ট্রেনের ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। এ সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। কিন্তু কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ভর হবে ১২ থেকে ১৫ টন। ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। কালুরঘাট সেতুর বর্তমান অবস্থার কারণে এই গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে। এ জন্য বুয়েটের পরামর্শক দলের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু সংস্কার করা হবে।
এর আগে ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করা হয়েছিল।
এই সেতু আগের চেয়ে মজবুত করতে এবং গতি বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শক হিসেবে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ একটি দলকে গত বছরের মে মাসে নিয়োগ দেয় রেলওয়ে। তবে শুরুতে সমীক্ষা ফি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বুয়েটের পরামর্শক দল চেয়েছিল ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা৷ তবে শেষ পর্যন্ত ৮ কোটি টাকা দিতে হয় বলে জানান রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, পরামর্শক দল থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিদ্যমান সেতুটি সংস্কার করতে অন্তত ৫৫ কোটি টাকা লাগবে।
এর আগে ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করে যান বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পর্যবেক্ষক দলের প্রধান এ এফ এম সাইফুল আমিন, অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত ও আবদুল জব্বার খান। তাঁরা সেতু পরিদর্শন করে রেলওয়েকে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেতুটির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে বুয়েটের কাছ থেকে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব নিয়েছিল রেলওয়ে।
সংস্কারকাজের জন্য এই মাসেই ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। ছয় মাসের মধ্যে এই সংস্কারকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বিকল্পও নেই। কেননা, এর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।আবু জাফর মিঞা, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামের সেতু নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন।
৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু এরপরও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। এ অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। যাত্রী ও চালকদের প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন।