দেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী তিনি। টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবও তাঁর। ১৯৮১ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন। ৭৫ বছরের জীবনে অনেক সংকট, চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। দেখেছেন সাফল্যের চূড়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও লম্বা সময় রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে আজ বুধবার ৭৬ বছরে পা দিচ্ছেন তিনি। আজ তাঁর জন্মদিন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। মধুমতী নদীবিধৌত তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম। শৈশব কেটেছে চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলেপিঠে।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন কাটে।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতিতে পদচারণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হন। এ সময় বিদেশে ছিলেন শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধু সপরিবার নিহত হওয়ার পর প্রবাসে শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। বিদেশে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি এই পদে আছেন। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসায় দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বলে থাকেন ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ মানবী।
দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে সেদিন লাখো জনতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁকে স্বাগত জানায়। উপস্থিত জনতার অভিবাদনের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হতে আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা এখন চতুর্থ দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। দেশের ইতিহাসে এমন রেকর্ড আর কারও নেই।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ বুধবার বেলা তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ১০টায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে (বাসাবো, সবুজবাগ) বৌদ্ধ সম্প্রদায়, সকাল ৯টায় খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩ /৭ /এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করবে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সারা দেশে সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটি আলোচনা সভা, গৃহহীনদের মধ্য গৃহ এবং দুস্থ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করে।