জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ লাগতে শুরে করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। কয়েক দিনের ব্যবধানে আবার বেড়েছে চাল, আটা, ময়দা, মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন ও চিনির মতো নিত্যপণ্যের দাম।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও নিউমার্কেট কাঁচা বাজার এবং মগবাজার, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকার মুদিদোকান ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে মোটা, মাঝারি ও চিকন—সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজি ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে কোথাও কোথাও চালের কেজি আরও দু–এক টাকা বাড়তি রাখছেন দোকানিরা।
বাজারে বেড়েছে আটার দামও। খোলা আটার দাম নতুন করে বেড়েছে প্রতি কেজি ২ থেকে ৩ টাকা। প্যাকেট আটার দাম বাড়বে বলে কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাঁদের জানিয়ে গেছেন বলে ব্যবসায়ীরা বলছেন।
খুচরা বাজারে মোটা চালের (স্বর্ণা) দাম ১ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৫১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দু–তিন দিন আগেও খুচরা বাজারে এই চালের দাম ছিল ৪৯ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। বিআর২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। পাইজাম ও বিআর২৮ চালের দাম দুই দিনে বেড়েছে দুই টাকা।
সরু চাল ও চিনিগুঁড়ার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। মানভেদে মিনিকেট চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকায়। এই চাল তিন দিন আগে ছিল ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮২ টাকায়। চিনিগুঁড়া কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। খোলা চিনিগুঁড়া চাল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন খরচ বাড়ায় চালের দামে প্রভাব পড়েছে। নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের সেলিম ট্রেডার্সের সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চালের বাজার কয়েক মাস ধরে ওঠানামা করতে করতে কিছুদিন ধরে একটা জায়গায় স্থির হয়েছিল। এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে প্রায় সব চালে প্রতি কেজি দুই টাকা করে বেড়েছে। মিল পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বাড়লে মিলাররা আরও দাম বাড়াতে পারেন। তখন চালের বাজারে আরেক দফা প্রভাব পড়তে পারে।
সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন বাজারদর হালনাগাদ করে। সংস্থাটির গতকালের তালিকায় দেখা গেছে, আগের দিনের চেয়ে গতকাল ১০টি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, আটা, ডিম, চিনি ও মুরগির মতো নিত্যপণ্য।
টিসিবির হিসাবেই বাজারে পাইজাম চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ টাকা। এক সপ্তাহ আগের ৫০ থেকে ৫৬ টাকার পাইজাম চাল গতকাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা আটার দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা ও চিনি প্রতি কেজি ২ টাকা বেড়েছে। আর ডিমের দাম প্রতি হালি ২ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিন আগে মুরগির দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। কোথাও কোথাও ১৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। খোলা আটা ছিল ৪১ থেকে ৪২ টাকা, এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। আদা, পেঁয়াজ ও রসুনের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির কারণে দূরত্বভেদে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আসতে পণ্যবোঝাই ট্রাকপ্রতি ১ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এই ভাড়া বৃদ্ধির হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।
কুষ্টিয়া থেকে একটি সাড়ে তিন টনের ট্রাকে ১৫ টন (১৫ হাজার কেজি) চাল পরিবহন করতে পারে। ব্যবসায়ীদের দেওয়া এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি কেজি চালে ট্রাকভাড়া বাবদ বাড়তি দিতে হচ্ছে ২৭ পয়সার মতো। কিন্তু ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি। বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে মুরগি ডিমের মতো পণ্যের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক মো. মিঠু প্রথম আলোকে বলেন, দিনাজপুর থেকে একটা মাঝারি মানের ডিমের ট্রাক ঢাকায় আসতে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
সরকার গত শুক্রবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে দেয়। রেকর্ড এই মূল্যবৃদ্ধির পর পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পরিবহনভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তাতে এই ব্যয়ের বোঝা সরাসরি সাধারণ ভোক্তাদের ঘাড়ে পড়ছে।