পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন (বাঁয়ে) ও জাপানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী ওনো কাইছি
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন (বাঁয়ে) ও জাপানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী ওনো কাইছি

সমরাস্ত্র বিক্রির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায় জাপান

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের সময় সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করেছে জাপান। সমরাস্ত্র বিক্রি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে একটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে জাপান।

আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের পঞ্চম বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এবারের বৈঠকে মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের সময় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর পর্যালোচনা বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংযুক্তি, কৃষি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), প্রতিরক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের অবনতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপত্তার বিষয়টি আসবে আলোচনায়।

বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী ওনো কাইছি তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে সমরাস্ত্র বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করছে জাপানের সামরিক সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে জাপানের একাধিক সামরিক সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান এর মধ্যেই সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উত্তরণে একমত হয়েছে। গত বছর জাপান তাদের ওএসএ প্রকল্পে যে চারটি দেশকে প্রথমবারের মতো যুক্ত করেছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এর মধ্যে দেশটি বাংলাদেশকে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের জন্য খসড়া দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিমা একটি দেশের সঙ্গে মিল রয়েছে। বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তবে এটি চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি জিসোমিয়া ও আকসা সইয়ের বিষয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত জিসোমিয়া সইয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে আঞ্চলিক সংযুক্তির কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বাংলাদেশ তুলতে পারে। বিশেষ করে পুরোদমে আধুনিক সমুদ্রবন্দরটি তৈরি হলে বাংলাদেশ ও জাপানের পাশাপাশি ভারতকে যুক্ত করে এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কূটনীতিক বলছেন, জাপান এরই মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিজের উপস্থিতি বাড়াতে মনোযোগ দিয়েছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মাধ্যমে ওই অঞ্চলে জাপান বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জাপান নিজেদের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চায়। বিনিয়োগের কারণে নিরাপত্তার ব্যাপারেও দেশটির আগ্রহ রয়েছে।