হোটেলে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশ পরিদর্শকসহ আহত ৮

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

খাবার টেবিলে বসা নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের এক সদস্যসহ আটজন আহত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলসংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সংঘাতে জড়ানো উপপক্ষ দুটি হলো চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও সিক্সটি নাইন। এর মধ্যে সিএফসি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর এবং সিক্সটি নাইন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, রাত আনুমানিক ১০টার দিকে শাহ আমানত হলসংলগ্ন একটি হোটেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজ আল মামুন তখন ওই হোটেলে খাচ্ছিলেন। ওই সময় সিএফসি উপপক্ষের ৮ থেকে ১০ জন কর্মী সেখানে খাবার খেতে যান। তবে সবার একসঙ্গে বসার মতো জায়গা ছিল না। এ অবস্থায় সিএফসির কর্মীরা মাহফুজকে সরে গিয়ে জায়গা দিতে বলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা হাতাহাতিতে জড়ান।

খবর পেয়ে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা শাহজালাল হল থেকে লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে বের হয়ে ফটকের সামনে জড়ো হন। সিএফসির নেতা–কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে একই ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাইরে বের হন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের নেতা–কর্মীরা একে অপরের দিকে ইট–পাটকেল ছোড়েন। এতে দুই পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হন।

রাত ১২টার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ইটের আঘাতে আহত হন।

ঘটনার সূত্রপাতের কারণ জানতে চেয়ে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজ আল মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।

পরে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিক্সটি নাইনের নেতা সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খাবার টেবিলে বসা নিয়ে হাতাহাতি থেকে ঝামেলা হয়েছিল। ইট–পাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে তাঁরা সিনিয়ররা (জ্যেষ্ঠ নেতারা) আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেন।

একই কথা বলেন সিএফসি উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। তিনি বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। তাঁরা আলোচনা করছেন।

জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাত পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। তাঁদের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ইটের আঘাতে আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। তাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদারের মুঠোফোনে কল করা হলে রাত একটার দিকে তিনি প্রথম আলোকে একটি সভায় ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি অনেক দিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ও আরেকটি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীনের ৯টি ও মহিবুল হাসানের ২টি উপপক্ষ রয়েছে।