মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি এপ্রিলে দেশে যৌথবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তিনটি গোলাগুলির ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। সংগঠনটি মনে করে, বিচারবহির্ভূত এ হত্যাকাণ্ড বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং এটি কখনই সমর্থনযোগ্য নয়।
আজ মঙ্গলবার সংগঠনটি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তারা প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়। এবারের প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে।
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনাই স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমএসএফ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। এতে কেএনএফের একজন নিহত হন। ২৭ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা উপজেলার বাকত্লাই এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলাকালে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির দুজন সদস্য নিহত হয়েছেন। ২৯ এপ্রিল টেকনাফের ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুরাপাড়া এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ডাকাত দলের গোলাগুলি হয়েছে। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে কৃষক বায়তুল্লাহ (৩৫) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন।
এমএসএফ বলছে, এপ্রিল মাসে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে (মার্চ) এ সংখ্যা ছিল ১২ জন। এ মাসে ৪ জন হাজতি ও ৬ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬ জন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে ১, পাবনা জেলা কারাগারে ১ ও লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে ১ জন বন্দীর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, সব কারাবন্দীকে বাইরের হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন, অথবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।
এমএসএফ মনে করে, কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী এপ্রিলে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতার ৪২টি ঘটনায় ১৮২ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নিহত হয়েছেন ৯ জন। অপর দিকে পুরোনো মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের ১৪৬ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩১টি। এর মধ্যে ১৪টি ঘটনাই ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। নির্যাতনের ঘটনায় ৫১ জন সাংবাদিক নানাভাবে নির্যাতিত ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন ১১ জন। আহত ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন ২৮ জন, হুমকির সম্মুখীন ৪ জন ও লাঞ্ছিত হয়েছেন ৮ জন।
এপ্রিলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে এমএসএফ বলছে, এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা এবং বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা বন্ধ হয়নি, বরং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে অনেক ক্ষেত্রে তা বেড়ে চলেছে।
প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি বলছে, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা গত মাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি এবং মতপ্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কারা হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনাও বন্ধ হয়নি। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার বেড়ে চলেছে, গণপিটুনির ঘটনাও বেড়েই চলেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার ও ভুক্তভোগীদের সুবিচারের দাবি করছে।