রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন নতুন আইসিইউ ইউনিটের লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেই লিফট অপসারণ করাতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে সেই ঠিকাদার সৈয়দ জাকির হোসেন আবার কাজ পাচ্ছেন। সমদরে তাঁকে দেওয়া হচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন ভবনের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি মেশিন) সরবরাহের কাজ। কর্তৃপক্ষ বলছে, কালো তালিকাভুক্ত না হলে, দরপত্রের শর্ত পূরণ করলে, সেই প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে তাদের কিছু করার নেই।
রাজশাহী নগরের মোল্লাপাড়া এলাকায় সরকারি কর্ম কমিশনের কার্যালয়। এ কার্যালয়ের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিস সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগ। প্রায় ৬০ লাখ টাকার দরপত্রে অংশ নেন ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেন। গণপূর্ত বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূল্যায়ন শেষে কর্তৃপক্ষ তাঁকেই কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে তাঁরা দুবার এই কাজের দরপত্র আহ্বান করেছিলেন, কিন্তু কোনো ঠিকাদার পাননি। তবে এবার দুজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্য ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেন কাজটি পাচ্ছেন। এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নকল লিফট সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের ব্যবধানে কেন আবার কাজ দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন-অর-রশিদ বলেন, কর্তৃপক্ষ এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনো কালো তালিকাভুক্ত করেনি এবং কোনো শাস্তি দেয়নি। সুতরাং তারা দরপত্রে অংশ নিতেই পারে। তারা দরপত্রের শর্ত পূরণ করে কাজ পেয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাইলে তিনি গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
পরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁকে (সৈয়দ জাকির হোসেন) তো এখনো কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। তিনি দরপত্রে অংশ নিতেই পারেন। শর্ত পূরণ করলে কাজ পেতেই পারেন। লিফট জালিয়াতির কারণে তাঁকে কোনো শাস্তি পেতে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের লিফট অপসারণ করা হয়েছে। এখন নতুন লিফট এনে লাগাক, তারপর শাস্তির বিষয়টি দেখা হবে।’
এ ব্যাপারে ঠিকাদার সৈয়দ জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন আইসিইউ ইউনিটে স্থাপনের জন্য দরপত্রে ফায়ার লিফট (অগ্নি প্রতিরোধক) চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার শুধু প্যাসেঞ্জার লিফট লাগিয়ে দেন। লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়ার পরে গত ৭ মে লিফট অপসারণের জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়। ৬ জুন সেই লিফটের কেবিন অপসারণ করা হয়। তার তিন দিন আগে ঠিকাদার লিফট অপসারণের কাজ শুরু করেছেন। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তিনি ‘এ’ গ্রেডের জায়গায় ‘সি’ গ্রেডের লিফট লাগিয়েছিলেন।
এর আগে এই অনিয়ম নিয়ে গত ৯ মার্চ প্রথম আলোতে ‘ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লিফট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।