আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

আশুলিয়া থানায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পুলিশ সদস্যকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় ছয় তরুণের লাশ পোড়ানোর মামলায় মুকুল চোকদার নামের পুলিশের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাঁকে আগামী ২৬ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আজ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে অংশ নেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। এ সময় বি এম সুলতান মাহমুদসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিকালে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ট্রাইব্যুনালকে জানান, দোহার থানায় কর্মরত ছিলেন পুলিশ সদস্য মুকুল চোকদার। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থেকে আরও একজন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা পুলিশ সদস্যের নাম মালেক। গতকাল বুধবার আদালত বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁকে উপস্থাপন করা হয়। এখন তিনি কিশোরগঞ্জে বন্দী আছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালে নথি পাঠানো হবে, তারপর এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন লাগিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব মরদেহে আগুন দেওয়া হচ্ছিল, তখন একজন জীবিত ছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এই নৃশংসতার সঙ্গে যেসব ব্যক্তি সরাসরি জড়িত, তাঁদের মধ্যে দুজনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের একজন কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

তাজুল ইসলাম বলেন, মুকুল চোকদার কনস্টেবল হলেও ওই ভয়াবহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিনই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল বন্ধের দিন থাকায় আজ তাঁকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সেখানে (সাভারের আশুলিয়া) তখন যিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি পালিয়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। তাঁর ওপরে যে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর ওপর আইজিপি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। সুপিরিয়র কমান্ড স্ট্রাকচার (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) থেকে নিচ পর্যন্ত গেছে। তাঁরা মাঠপর্যায়ে এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি অপরাধগুলো প্রমাণ করতে চাই, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সে জন্য গ্রাউন্ড লেভেলে (মাঠপর্যায়ে) নিষ্ঠুরতম কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদের কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। এমন নয়, যাত্রাবাড়ীতে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষকে মারা হয়েছে, সেখানে ৩০০, ৪০০, ৫০০ পুলিশ ছিল। প্রত্যেককে আমরা ধরব না। আমরা তাঁদের কমান্ডারদের ধরব।’

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যখন ঘটনাটি সরাসরি প্রমাণের প্রশ্ন আসবে, একেবারে অকাট্য প্রমাণ পাব যে তাঁরাই সরাসরি লাশে আগুন দিয়েছেন, তখন তো তাঁকে স্পেয়ার (ছেড়ে দেওয়া) করার কোনো সুযোগ নেই। তাঁদের মাধ্যমে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত কমান্ড স্ট্রাকচার ও নির্দেশের যে ধারাবাহিকতা, সেটা প্রমাণিত হয়েছে বা হবে। সে কারণে আমরা তাঁদের ধরেছি।’

গত মঙ্গলবার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনার মামলা (বিবিধ মামলা) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নথিভুক্ত হয়। সে দিনই ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সেখানে কর্মরত চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।