১০-১২ অক্টোবর ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব। প্রথম বিদেশ সফরে এক সপ্তাহ থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে।
পররাষ্ট্রসচিবের আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব থাকবে। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে বিরল সেই একান্ত বৈঠকে বাইডেন ড. ইউনূসের সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এরপর ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনার পথ ধরে সংস্কারের পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে ওয়াশিংটন সফরে আলোচনা হবে।মো. জসীম উদ্দিন, পররাষ্ট্রসচিব
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই আলোচনার পথ ধরে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। দুই দেশের সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। তবে তিনি ওয়াশিংটন থাকবেন ১০ থেকে ১২ অক্টোবর। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন দিনের ওয়াশিংটন সফরের সময় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস, বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডসে ফোর্ড, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এসব বৈঠকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ এবং শ্রম দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।
দুই দেশের সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। তবে তিনি ওয়াশিংটন থাকবেন ১০ থেকে ১২ অক্টোবর। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পাশাপাশি নানা স্তরে এ নিয়ে তিন দফা আলোচনা হতে চলেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। এরপর গত মাসের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন জো বাইডেন ও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ তারই প্রতিফলন। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনার পথ ধরে সংস্কারের পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে ওয়াশিংটন সফরে আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে দুর্নীতি যে বড় বাধা, সেটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। দুর্নীতি দূর করার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশের অনুপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় মার্কিন আমদানিকারকদের মধ্যে যে অস্বস্তি রয়েছে, সেটিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের প্রসঙ্গে জোর দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার অগ্রগতির দিকগুলো পররাষ্ট্রসচিবের সফরে গুরুত্ব পাবে। সামগ্রিকভাবে, বিভিন্ন খাতে সংস্কার, অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শ্রম ও মানবাধিকার, সুশাসন, সন্ত্রাসবাদ দমন, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে দুর্নীতি যে বড় বাধা, সেটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। দুর্নীতি দূর করার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশের অনুপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় মার্কিন আমদানিকারকদের মধ্যে যে অস্বস্তি রয়েছে, সেটিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের প্রসঙ্গে জোর দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়ে ভালো ধারণা রয়েছে ওয়াশিংটনের। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রশাসন তাঁর সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। গত মাসে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ওয়াশিংটনের বার্তা ছিল উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা এবং সংস্কার—সব বিষয়ে ঢাকার পাশে থাকবে। আর সেই বার্তাটা যে যথেষ্ট আন্তরিক এবং বাস্তবসম্মত, তা আরও জোরালো হয়েছে নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের সঙ্গে বাইডেনের বিরল সাক্ষাতে।