সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় খাতরা। বুধবার ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সইসহ অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। দুই নিকট প্রতিবেশী অনিষ্পন্ন সমস্যাগুলোর সমাধানে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় খাতরার সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তিস্তাসহ সব আন্তসীমান্ত নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করেছি। এ বিষয়গুলো সুরাহায় ভারতের নিবিড় সহযোগিতার প্রত্যাশা করেছি। সেই সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ভারতকে বলেছি।’

ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা। বুধবার ঢাকায় এই বৈঠক হয়

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা চলছে। তাদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যে সমস্যা আছে, সেটি বিদ্যমান রয়েছে। এরপরও বাংলাদেশের যে আবেদন, সেটার বিষয়ে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি জানান, গঙ্গা চুক্তির নবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওরাও হয়তো করছে। ভবিষ্যতে দুই পক্ষ হয়তো প্রাক্‌-চুক্তি পর্যালোচনার জন্য বসবে।

সীমান্ত হত্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটাকে শূন্যে নামিয়ে আনতে দুই পক্ষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে ভারত সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। আন্তসীমান্ত অপরাধসহ সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে চলমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার বিষয়ে দুই পক্ষই সম্মতি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে ভারত যাচ্ছেন

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেপ্টেম্বরে জি-২০-এর মূল সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং আমরা যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছি।’ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কুমার খাতরার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন ভারতের নিকটবর্তী প্রতিবেশীর নীতির আওতায় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার লাভ করে। বাংলাদেশ ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু এবং অঞ্চলের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার উল্লেখ করে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাঁর সরকারের গভীর আগ্রহের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা

বর্তমানে ভারতের সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারত থেকে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি আগামী দিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলেও আমরা আশা করছি। চলমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহে আমি গুরত্ব আরোপ করেছি। ভারত থেকে জ্বালানি আমদানি করতে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্যোগের বিষয়েও আলোচনা করেছি। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়েও ভারতের সহযোগিতা চেয়েছি।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারত আশ্বস্ত করেছে নেপাল ও ভুটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনার যে বিষয়টি রয়েছে, সেটির বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রকল্প নেওয়া হলে তারা সাহায্য করবে। তারা এ বিষয়ে সাহায্য করবে বলেছে। নেপালের পানিমন্ত্রী দিল্লিতে যাচ্ছেন। সেখানে আলোচনা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আদানি গ্রুপের বিষয়ে আলাদাভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য যে সহযোগিতা, যেমন পাইপলাইন বা ট্রান্সমিশন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা একটি অনুরোধ করেছে, তাদের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে বিদ্যুৎ নেবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু কাজ করা হয়েছে। সেগুলো তাকে অবহিত করা হয়েছে।

মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। এ বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ভারত অনুরোধ করেছে এবং আমরা সাড়া দিয়েছি।’

গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুই পক্ষের যে উন্নয়ন কার্যক্রম ও ত্রিপুরায় যে কাঁটাতারের বেড়ার কাজ কিছুটা বাকি আছে, সে বিষয়ে যে সমঝোতা হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেটা যাতে সমাধান করা যায়, সেটির বিষয়ে তারা বসেছিল। আমার ধারণা, অচিরেই এই কাজ শুরু হবে।’

বাণিজ্য

ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে যেসব ট্যারিফ বা বাধা আছে, সেগুলো দূর করার ওপর গুরত্ব আরোপ করেছে ঢাকা।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছি। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে যে কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা সেফা, সেটা সম্পাদনের জন্য আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। আর ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম বেগবান করতেও আমরা একমত হয়েছি।’