নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতে নথি দেখে বাদীপক্ষের (দুদক) সাক্ষ্য নেওয়ার বৈধতা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন শুনানিতে তাঁর আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে হইচই হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। পরে পক্ষগুলোর সম্মতিতে আদালত আগামীকাল বুধবার বেলা দুইটায় পরবর্তী শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, শাউট (চিৎকার) করা উচিত নয়। যদি শাউট (চিৎকার) করেন, পাশ থেকে কথা বলেন—এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে শুনানি সম্ভব হবে না।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৯ এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলছে। এই মামলায় বিচারিক আদালতে নথি দেখে দেখে বাদীপক্ষের ১ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২০ জুন দেওয়া এক আদেশ সূত্রে গত আগস্টে হাইকোর্টে ওই আবেদনটি করেন খালেদা জিয়া। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী কায়সার কামাল। খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা ও আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যর্টনি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ এবং দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে ছিলেন।
মামলার পটভূমি তুলে ধরে শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৯৭ সালে নাইকোর প্রস্তাব নিয়ে মামলাটির জন্ম। মাইনাস টু থিওরি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৭ সালে মামলাটি করা হয়। সে সময় দুটি মামলা হয়। কাকতালীয়ভাবে দুটি মামলার একটির নম্বর ১৯, অন্যটির ২০। ১৯ নম্বর মামলাটি হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এটি ২০ নম্বর। ১৯ নম্বর মামলাটি বাতিল হলেও ২০ নম্বরটি চলছে। একই ঘটনা। ওই মামলাটি (১৯ নম্বর) না থাকলে এটি (২০ নম্বর) কীভাবে টেকে? এটা শতভাগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। একটি বাতিল হচ্ছে, অন্যটি হচ্ছে না।
খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, দেখে দেখে সাক্ষীর বলা—কতদূর অনুমোদনযোগ্য? এই প্রশ্নগুলো আসবে। কালকে দ্বিতীয়ার্ধে রাখতে পারেন। এ সময় আদালত বলেন, বুধবার তো মোশন (নতুন মামলা) থাকে না।
এর একপর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘সাক্ষী ইতিমধ্যে শেষ, গতকালও (বিচারিক আদালতে) ছিলাম। জেরায় বাদীপক্ষের সাক্ষীকে নথি দেখে উত্তর দিতে বলেছেন তাঁরা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা)।’ আবার নথি দেখে বলা নিয়ে আবেদন করেছেন, যা সাংঘর্ষিক। কাল দুপুরে শুনানির জন্য রাখা যেতে পারে।
তখন তাঁকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়ার একাধিক আইনজীবী মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বলেন, এখানে আবেদন দায়ের করার পর কীভাবে শেষ করে? এর একপর্যায়ে উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘শাউট করার কী দরকার? যদি শাউট করেন, পাশ থেকে কথা বলেন—এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে শুনানি সম্ভব হবে না। শব্দ করবেন না। প্রয়োজনে এক–দুই ঘণ্টা বলবেন। পরে আদালত কাল শুনানির দিন ও সময় নির্ধারণ করেন।’