বাংলাদেশের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালতে ওই অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে তাঁর বিচার শুরু হলো।
একই অভিযোগে পি কে হালদার ছাড়াও তাঁর ভাই প্রাণেশ হালদার এবং সহযোগী স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের আগে মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ পাচারবিষয়ক আইনের ৩ নম্বর ধারায় পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
ভারতের অর্থনৈতিক অনিয়মের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘অভিযুক্ত আসামিরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, মামলার অন্যতম অভিযুক্ত পৃথ্বীশ হালদার (পি কে হালদারের অপর ভাই) বর্তমানে কানাডায় আত্মগোপনে আছেন। তাই এই মামলায় এখনো তাঁকে যুক্ত করা যায়নি। যদিও ইডির তরফে তাঁকে যুক্ত করার প্রক্রিয়া এখনো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০২২ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাট থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ইডি। পরে নানা জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাঁর পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন মেয়াদে বেশ কয়েক দফায় আসামিদের রিমান্ড ও বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইডির কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদোপম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন।
বাংলাদেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এই কাজ করতে পি কে হালদার আগেই শেয়ার কিনে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। তাঁর এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। তবে তার আগেই ২০১৯ সালের শেষ দিকে দেশ ছাড়েন পি কে হালদার।
এদিকে বাংলাদেশের আদালতে গত অক্টোবরে পি কে হালদারের সাজা হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দায়ে তাঁকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া তাঁর সহযোগী ১৩ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত চলছে।