তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকেও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত আজ বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন। ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারাগারে নেওয়ার আগে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আদিলুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’
আদিলুর রহমানের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়াও প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাননি আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম বলেন, আসামিদের সাজা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, বিতর্কিত ৫৭ ধারায় আজ এক স্বনামধন্য অধিকারকর্মীকে সাজা দেওয়া হলো, যেটা মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
এ মামলায় গত ২৪ আগস্ট শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। তবে সেদিন আদালত রায় ঘোষণা করেননি। রায় ঘোষণার জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিকৃত তথ্য প্রচারের মামলায় অধিকারের আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
সে বছরই ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।
পাশাপাশি তাঁরা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ।
আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান, যা দণ্ডবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।
ওই মামলায় ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে ২০১৩ সালের ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা অধিকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় অধিকারের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ও ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে পাঠায়।
এরপর অধিকার সেই চিঠির জবাবে হতাহতের কোনো তালিকা না দিয়ে সরকারকে জানিয়েছিল, হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এ ঘটনা তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটির কাছে তারা তালিকা হস্তান্তর করবে।